খুলনার কয়রা উপজেলার বেশির ভাগ জমি লবণাক্ত। এ লবণাক্ত জমিতেও বার্লি বা যবের চাষ করা যায়, এমন ধারণা নেই উপকূলের কৃষকদের মধ্যে। তবে এবার প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে কয়রার বাগালী এলাকায় অপ্রচলিত এ ফসলের আবাদে সফলতা পেয়েছেন কৃষক হাবিবুর রহমান (৪০)। এ অঞ্চলে শস্যটি চাষে সফলতা কৃষিতে নতুন সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
কৃষক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এবারই প্রথমবার বাগালী ইউনিয়নের বিলে আমার ১৬ শতক জমিতে বার্লি চাষ করেছি। বিলটিতে লবণাক্ততা ও পানির সমস্যার কারণে আমন ধানের বাইরে কখনো কোনো ফসলের চাষ কেউ করেন না। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগের পরামর্শে বার্লি চাষ করেছি। তাঁরা আমাকে বিনা মূল্যে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা থাকলেও এখন ফলন ভালো দেখে আনন্দ লাগছে। আমার দেখাদেখি ইতিমধ্যে এ নতুন ফসল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক কৃষক। বার্লির বীজ রেখে দিতে বলেছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
বার্লি চাষের সম্ভাবনা সম্পর্কে কয়রা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে আমাদের উপকূলের কৃষিকে খাপ খাইয়ে নিতে প্রচলিত কৃষি থেকে কৃষকদের নির্ভরতা কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণে বার্লি চাষে কৃষকদের সম্পৃক্ত করা গেলে তা এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। অনুর্বর জমিতে খুবই স্বল্প খরচে বার্লির আবাদ করা সম্ভব। এটি সহজে পোকামাকড়ে আক্রান্ত হয় না। এ ছাড়া বিনা সেচেও বার্লির ফলনে খুব একটা হেরফের হয় না। এ অঞ্চলে লবণাক্ততার কারণে রবি মৌসুমে যেখানে অন্য ফসলের আবাদ ঝুঁকিপূর্ণ, সেখানে বার্লির আবাদ বিস্তার করা যেতে পারে। এটি যথেষ্ট লবণাক্ততা সহনশীল একটি ফসল।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মতিয়ার রহমান বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে আমরা কয়রা উপজেলায় বার্লি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করছি। কয়রা সদরে বার্লির জাত উদ্ভাবনে চলছে নিবিড় গবেষণা। মধ্যপ্রাচ্য থেকে বার্লির বীজ এনে ছয় বছরের একটি গবেষণা চলমান কয়রায়। এর মধ্যে খরা, বন্যা, লবণসহিষ্ণু বার্লির জাত উদ্ভাবনের দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা। পরীক্ষামূলকভাবে এবার বার্লি চাষে আমরা সফলও হয়েছি।’
বার্লির পুষ্টিগুণ ও সম্ভাবনা সম্পর্কে মতিয়ার রহমান বলেন, ‘আমাদের দেশে যে পরিমাণ বার্লির চাহিদা রয়েছে, সেই পরিমাণ উৎপাদন হয় না। ফলে আমাদের বিপুল পরিমাণ বার্লি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। শস্যটির চাষ বাড়ানো সম্ভব হলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি বার্লিনির্ভর অনেক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার সম্ভাবনা আছে। শস্যটি অনেক উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। এটির আটা দিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাবার (যেমন রুটি, শিশুখাদ্য, স্যুপ) তৈরি করা হয়। এমনকি রোগীর পথ্য হিসেবেও বার্লি খাওয়া হয়ে থাকে।
সূত্র :প্রথম আলো