আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সহায়তায় নেওয়া সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ‘জেনেটিক গেইন’–এর মাধ্যমে ধানের নতুন জাত উদ্ভাবনের সময়কাল চার থেকে পাঁচ বছর কমিয়ে আনা যাবে। তাতে ৮-১০ বছরের মধ্যেই ধানের নতুন জাত পাওয়া যাবে। বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় সঠিক জাত উদ্ভাবনেও তা কাজে লাগবে। বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের (বিএমজিএফ) অর্থায়নে ইরি ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইরি আয়োজিত এগ্রি (এক্সিলারেটেড জেনেটিক গেইন ইন রাইস) নেটওয়ার্ক ট্রায়াল ২০২৩-এর বার্ষিক অগ্রগতি সভায় এসব কথা জানানো হয়। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী সেশনে ব্রি, ইরি, বিনাসহ বিভিন্ন ধান গবেষণাকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে স্বল্প সময়ে ধানের জাত উদ্ভাবন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিরূপ পরিস্থিতিতে উন্নত জাতের ধান গবেষণার জন্য এগ্রি নেটওয়ার্কস ট্রায়ালের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নিয়ে মোট ১১টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের (বিনা) মহাপরিচালক মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, এমন অভিনব উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত উদ্ভাবনের এখনই উপযুক্ত সময়। ব্রি, বিনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ধান উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষকদের সহায়তা করছে ইরি।
মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম জানান, এগ্রি নেটওয়ার্কস প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ধানের জেনেটিক গেইন বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। বর্তমানে মাঠে প্রচলিত বেশির ভাগ জনপ্রিয় ধানের জাতের বয়স ২৮-৩০ বছরের বেশি। অনেকগুলো নতুন জাত উদ্ভাবন করা হলেও সেগুলো আগের জনপ্রিয় জাতগুলোকে প্রতিস্থাপন করতে পারেনি। ধান উৎপাদনে জেনেটিক গেইন বাড়ানোর জন্য ধানের প্রজনন চক্রের সময়কাল সংক্ষিপ্ত করা, প্রজনন লাইন নির্বাচন নির্ভুল করা, প্রজনন তথ্য ব্যবস্থাপনার আধুনিক কৌশল ব্যবহার এবং ব্যাপকভাবে সরেজমিন মাঠ গবেষণা করে ভৌগোলকি স্থান, বাজার ও কৃষকের চাহিদাভিত্তিক জাত উদ্ভাবনের লক্ষ্যে ইরির নেতৃত্বে কাজ করছে দেশীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ব্রির মহাপরিচালক মো. শাহজাহান কবীর বলেন, বিএমজিএফের আর্থিক সহায়তায় এবং ইরির কারিগরি সহায়তায় এগ্রি নেটওয়ার্কস ট্রায়ালের মাধ্যমে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এতে ধানের জাত উদ্ভাবন প্রক্রিয়ার সময় পাঁচ-সাত বছর কমিয়ে আনা হচ্ছে।
বাংলাদেশে ইরির কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ হোমনাথ ভান্ডারী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা টেকসই করার ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। গবেষণা ও মানবসম্পদ এবং ভৌত সুবিধার উন্নয়নসহ সব ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের গবেষণা খাতে ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি যেমন জিনোমিক্স, ফেনোমিক্স, প্রোটোমিক্স, বায়োইনফরমেটিক্স, জিনোম এডিটিং, স্পিড ব্রিডিং, অটোমেশন, ডিজিটাইজেশনে বাংলাদেশের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ইরির সহায়তা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।
ইরি বাংলাদেশের সিনিয়র রাইস ব্রিডার এবং এগ্রি নেটওয়ার্ক প্রকল্প প্রধান মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম স্বাগত বক্তব্য দেন এবং কর্মশালার অ্যাজেন্ডা নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বাংলাদেশে ইরি-ব্রি, অন্যান্য কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালিত এগ্রি নেটওয়ার্কস ট্রায়ালের গত এক বছরের হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
সূত্র : প্রথম আলো