যুক্তরাজ্যের বাজারে ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের রপ্তানির পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে, যার মধ্যে শুধু পোশাকেরই রপ্তানি হবে ১১ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাজ্যের সম্প্রতি ঘোষিত ডেভেলপিং কান্ট্রিজ ট্রেডিং স্কিম (ডিটিসিএস) অনুযায়ী বাংলাদেশের এলডিসি সুবিধা ২০২৯-এর নভেম্বর পর্যন্ত জন্য নিশ্চিত করবে। এই সুবিধা পোশাক রপ্তানিকে এলডিসি উত্তরণ হওয়ার পরও প্রবৃদ্ধি অর্জনে সাহায্য করবে। কিন্তু এই সুবিধা রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের জন্য পোশাক খাত ছাড়াও অন্য খাতগুলোর প্রচারের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হতে পারে। রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (র্যাপিড) এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়।
সম্প্রতি র্যাপিড এবং যুক্তরাজ্য সরকারের এফসিডিও আয়োজিত ‘যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ’ শিরোনামের স্টেকহোল্ডার কনসালটেশন সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব তপন কান্তি ঘোষ, সম্মানিত অতিথি হিসেবে এফসিডিওয়ের ডেপুটি ডিরেকটর ড. ডানকান ওভারফিল্ড এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিইও এ এইচ এম আহসান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন র্যাপিডের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক। র্যাপিডের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, বাংলাদেশের বর্তমান উৎপাদন ও রপ্তানিকাঠামো, প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের বাজারের চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রপ্তানি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। পাশাপাশি হালকা প্রকৌশল খাতে সাইকেল রপ্তানি ৭ শতাংশ, কৃষিখাদ্য এবং কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য ২৯ শতাংশ বৃদ্ধি করা সম্ভব। এর পাশাপাশি সম্ভাবনা রয়েছে মাছ ও চিংড়ি রপ্তানি। এই সম্ভাবনাময় সেক্টরগুলিকে সঠিক নীতি সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশের নতুন রপ্তানির দুয়ার খোলা উচিত। তবে এর জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে, বাজার সুনির্দিষ্ট করা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাপ্লাই সাইডের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের বাজার সম্পর্কে জ্ঞান ও তথ্যের অভাব, পেমেন্টের সমস্যা, অপর্যাপ্ত রপ্তানি প্রণোদনা, অপর্যাপ্ত সরবরাহ ক্ষমতা এবং দক্ষতার অভাবের বিষয়গুলো গবেষণায় উঠে এসেছে।
বিশ্লেষণ অনুযায়ী যুক্তরাজ্যের সাপ্লাই চেইনের সঙ্গে পোশাকবহির্ভূত রপ্তানিকারকদের সংযোগ না থাকা, যুক্তরাজ্যের স্ট্যান্ডার্ড ও সার্টিফিকেশন মেনে চলার অসুবিধা এবং বাংলাদেশের নিম্নমানের উৎপাদনের ভুল ধারণা এই সমস্যাগুলোকে আরও তীব্র করেছে। এছাড়াও লিড টাইম অনেক বেশি হওয়া এবং অবকাঠামোগত বাধাকেও যুক্তরাজ্যে বাজারে রপ্তানি প্রচারের সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আলোচনায় এফসিডিওয়ের ডেপুটি ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর ড. ডানকান ওভারফিল্ড বলেন, ডিসিটিএসয়ের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় নীতিগত সহায়তা অন্বেষণ করতে হবে। বাংলাদেশ থেকে উৎপন্ন পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আরও বাড়বে, যেমনটি বছরের পর বছর ধরে হংকং ও চীন থেকে পণ্যের ধারণা পরিবর্তিত হয়েছে। ইপিবি ভাইস চেয়ারম্যান ও সিইও এ এইচ এম আহসান তার বক্তৃতায় বলেন, ‘রপ্তানি বহুমুখীকরণের ক্ষেত্রে আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছি। তবে, আরও কাজ করতে হবে। বিশেষ করে মান ঠিক রাখা, সঠিক প্যাকেজিং নিশ্চিত করা, দেশের প্রতি নেতিবাচক ধারণা দূর করতে আরও কাজ করতে হবে।’
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মো. ফয়জুল ইসলাম উল্লেখ করেন, উচ্চ আমদানিশুল্ক ভোক্তা এবং উৎপাদক উভয়কেই নিরুত্সাহিত করে। তাই সরকার ট্যারিফ র্যাশনালিজেশনে কাজ করছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ‘আমাদের রপ্তানিকারকরা ইইউ জিএসপি সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত, কিন্তু যুক্তরাজ্যের ডিসিটিএস সম্পর্কে খুব কম জানেন। সঠিক তথ্যের মাধ্যমে তারা এটি থেকে সুবিধা নিতে পারে। ২০২৬ সালের পর বাংলাদেশের শুল্কের হার কমাতে হবে, তাই আমাদের রপ্তানিকারকদের ক্রমবর্ধমান প্রতিযোগিতার বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’
সূত্র :দৈনিক ইওেফাক