জাল নথিপত্র বানিয়ে পণ্য রপ্তানির আড়ালে ৩৮২ কোটি টাকা পাচার করেছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে পণ্য রপ্তানি করলেও দেশে টাকা আনেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- ঢাকার দক্ষিণখানের সাবিহা সাইকি ফ্যাশন, ঢাকার কাকরাইলের এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন, ঢাকার দক্ষিণখানের ইমু ট্রেডিং করপোরেশন এবং ঢাকার উত্তরার ইলহাম ট্রেডিং করপোরেশন।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দার প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফখরুল আলম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সাবিহা সাইকি ফ্যাশন ৮৬টি পণ্য চালানের বিপরীতে ৯৯৭ টন পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে প্রায় ১৮ কোটি টাকা, এশিয়া ট্রেডিং করপোরেশন এক হাজার ৩৮২টি চালানে ১৪ হাজার ৮৫ টন পণ্য রপ্তানি করে ২৮২ কোটি টাকা, ইমু ট্রেডিং করপোরেশন ২৭৩টি চালানে দুই হাজার ৫২৩ টন পণ্যের বিপরীতে ৬২ কোটি টাকা এবং ইলহাম নামক প্রতিষ্ঠান ৩৯টি চালান রপ্তানি করে ১৭ কোটি টাকা পাচার করেছে। এই অপকর্মের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে চট্টগ্রামের দক্ষিণ হালিশহর সিমেন্ট ক্রসিং এলাকার লিমেক্স শিপার্স লিমিটেড নামের সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠান। অভিযুক্ত চারটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানেরই সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ছিল লিমেক্স শিপার্স লিমিটেড।
প্রতিষ্ঠানগুলো টি-শার্ট, টপস, লেডিস ড্রেস, বেবি সেট, ব্যাগ, পোলো শার্ট, জ্যাকেট, প্যান্ট, হুডি ট্রাউজারসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েকটি দেশে রপ্তানি করে পণ্যের বিনিময়মূল্য পাচার করেছে। যেসব দেশে পাচার করেছে, সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, কাতার, যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, নাইজেরিয়া ও মালয়েশিয়া।
শুল্ক গোয়েন্দার মহাপরিচালক ফখরুল আলম বলেন, প্রথমে সাবিহা সাইকি ফ্যাশন নামের প্রতিষ্ঠানের জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় আরও তিন প্রতিষ্ঠানের অর্থ পাচারের তথ্য পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, পাচারকৃত অর্থের পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যখন কোনো জালিয়াত চক্র অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে রপ্তানি করে, তখন তার উদ্দেশ্যই থাকে রপ্তানিমূল্য কোনোভাবেই দেশে আনবে না। সে ক্ষেত্রে তারা পণ্যের মূল্য কোনো না কোনোভাবে কম দেখানোর চেষ্টা করে। তার প্রধান লক্ষ্যই হলো টাকা বিদেশে পাচার করা। এ ক্ষেত্রে রপ্তানির যে অনুমতিপত্র (ইএক্সপি) ব্যবহার করা হয়েছিল, সেগুলো ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে। একটি অনুমতিপত্র একাধিক রপ্তানির চালানে ব্যবহারের সুযোগ নেই। ফলে এসব ইএক্সপির কার্যকারিতা নেই। এতে বৈধ পথে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে ফিরিয়ে আনার সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় অবস্থিত এসএপিএল (ওসিএল) ডিপোতে অভিযান চালিয়ে সাবিহা সাইকি ফ্যাশনের সাত কনটেইনার রপ্তানি পণ্য পরীক্ষা করলে অনিয়ম খুঁজে পাওয়া যায়। এরপর সার্বিক অনিয়মের বিষয়টি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালককে প্রধান করে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
সেই তদন্তে চারটি প্রতিষ্ঠানের এ পর্যন্ত পাঠানো সব রপ্তানি চালানের কাগজপত্র পরীক্ষা করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিদেশে পণ্য রপ্তানি ও পণ্যের মূল্যের অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্টে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি এবং ভুয়া সেলস কন্ট্রাক্ট ব্যবহার করেছে। অন্য প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করায় এ জাতীয় ইএক্সপির কোনো প্রকার কার্যকারিতা নেই। তাই বৈধ পন্থায় বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবসিত হওয়ার সুযোগ নেই।
সূত্র: যুগান্তর