চলতি অর্থবছরের আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ব্যাংকগুলো ২১ হাজার ৬৬ কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩০ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। সে হিসাব আট মাসেই লক্ষ্যমাত্রার ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকে কৃষিঋণ বিতরণ বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে ১২টি ব্যাংক কৃষিঋণ বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে তার শতভাগ অর্জন করেছে। তবে পিছিয়ে পড়েছে ১৪ ব্যাংক। আট মাস পার হলেও এসব ব্যাংক লক্ষ্যের ৫০ শতাংশ ঋণও বিতরণ করতে পারেনি।
নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগের বেশি ঋণ বিতরণ করেছে, ব্যাংক আল-ফালাহ, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, হাবিব ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, সিটিব্যাংক এনএ, এইচএসবিসি এবং উরি ব্যাংক।
কৃষিঋণ বিতরণে এগিয়ে রয়েছে রাষ্ট্র-মালিকানাধীন ব্যাংকগুলো। এ সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করেছে ৮ হাজার ৬২৩ কোটি ১৮ লাখ টাকা। তাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ শতকরা ৭৩ দশমিক ৪২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো। আর বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ১৮ হাজার ৩৮২ কোটি এবং বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৭১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ৮ মাসে বিদেশি ও বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলো ১২ হাজার ৪৩৪ কোটি বিতরণ করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৬৪ দশমিক ৯২ শতাংশ। তথ্য মতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষিঋণ বিতরণের স্থিতি ৫১ হাজার ২৩৬ কোটি। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ২০ হাজার ৯৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ কৃষিঋণ আদায়ের হার প্রায় ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, মোট বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৯৩২ কোটি। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৬৮ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, আট মাসে শস্য খাতে বিতরণ হয়েছে ১০ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। সেচ সরঞ্জাম ক্রয় খাতে ১৭৯ কোটি, কৃষি সরঞ্জাম খাতে ১৪৯ কোটি, গবাদি পশু এবং হাঁস-মুরগির খামারে ৪ হাজার ৪৩৯ কোটি, মৎস্য খাতে ২ হাজার ৫৭৭ কোটি, শস্য গুদামজাত এবং বিপণনে ১০৪ কোটি, দারিদ্র্য দূরীকরণ খাতে ১ হাজার ২৪৭ কোটি এবং অন্যান্য খাতে ২ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২৮ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। সে সময়ে ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি, ১০২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করেছিল।
এ ছাড়াও, গত ২১ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ২০২২ সালের ১৭ নভেম্বর জারি করা ‘দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন ও পরিচালনার নীতিমালা’ শীর্ষক সার্কুলারে ‘গরু মোটাতাজাকরণ’ খাত অন্তর্ভুক্ত করে নতুন সাকুলার জারি করা হয়। আগের সার্কুলারে বলা হয়েছিল, ধান চাষ, মাছ চাষ, শাকসবজি, ফল ও ফুল চাষ, প্রাণিসম্পদ খাতের আওতায় পোলট্রি ও দুগ্ধ উৎপাদন খাতে এই তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করা যাবে। মঙ্গলবার জারি করা নতুন সার্কুলারে ‘গরু মোটাতাজাকরণ’ খাত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সূত্র :দৈনিক ইওেফাক