এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেছেন, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটে বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে ভালো ব্যবস্থাপনা করেছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সংস্কার কার্যক্রম শুরু করেছে সরকার। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। ব্যাংক ঋণের নয়–ছয় সুদের হার তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ডলারের একক বিনিময় হারের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
অবশ্য মধ্য মেয়াদে টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য আরও কিছু সংস্কারকাজ করার ওপর জোর দিয়েছেন এডিমন গিন্টিং। তিনি বলেন, রাজস্ব খাত ও সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সংস্কার আনতে হবে। সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ বা এফডিআই আকর্ষণে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার কাজটিও গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক সংস্কারকাজেরই স্বল্পকালীন কষ্ট থাকে। তবে দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাওয়া যায় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এডিবির ঢাকা কার্যালয়ে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংস্থাটির কান্ট্রি ডিরেক্টর। সংবাদ সম্মেলনে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক ২০২৩, এপ্রিল সংস্করণ প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন এডিবির সিনিয়র কান্ট্রি স্পেশালিস্ট সুন চান হোং। উপস্থিত ছিলেন এডিবি ঢাকা কার্যালয়ের বহিঃসম্পর্ক বিভাগের প্রধান গোবিন্দ বার।
এডিবি বলছে, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ হতে পারে। সংস্থাটি মনে করে, স্থানীয় ভোগ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে পণ্য রপ্তানিতে দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও কমবে।
গত সেপ্টেম্বরে এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকে বলা হয়েছিল, চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।
এদিকে চলতি অর্থবছরের গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এডিবি। জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়, গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং বৈশ্বিক বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির চাপ বেড়েছে।
অবশ্য বৈশ্বিক অর্থনীতির ধীরগতির মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মাঝারি মানের প্রবৃদ্ধি হবে। এডিবির পূর্বাভাস, আগামী অর্থবছর জিডিপির প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৬ শতাংশ। তার কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জ্বালানি ব্যয় সহনীয় হয়ে আসতে পারে। তাতে তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়বে। অন্যদিকে বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি চাকরি নিয়ে প্রবাসে যাওয়ায় প্রবাসী আয়ের প্রবাহ বাড়তে পারে। তাতে অভ্যন্তরীণ ভোগ ব্যয় বাড়বে। এ ছাড়া গড় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সংস্থাটি।
এডিবির ডেভেলপমেন্ট আউটলুকের তথ্যানুযায়ী, এশিয়া অঞ্চলে চলতি অর্থবছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ। আগামী অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধি একই থাকতে পারে। চলতি অর্থবছর এশিয়া অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি হতে পারে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, যা আগামী বছর কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়াতে পারে।
গত বছর জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের বিষয়টি যৌক্তিক ছিল কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন গিন্টিং বলেন, জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ে দুটি উপকার হয়েছে। প্রথমত, জ্বালানি তেলের ব্যবহার কমেছে। দ্বিতীয়ত, রাজস্ব সাশ্রয় হয়েছে। সেই রাজস্ব অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় করতে পারছে সরকার। তবে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারের অস্থিরতার এই সময়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানির মতো বিকল্প উৎস খোঁজার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
সূত্র : প্রথম আলো