সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে রোজা সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে পানাহার করাকে ইফতার বলে। আর পানাহার সামগ্রীকে বলা হয় ইফতারি। সময় হওয়ার সঙ্গে দ্রুত ইফতার করা রোজার গুরুত্বপূর্ণ আমল।
আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনার্থে সারাদিন রোজা রাখার পর যখন আল্লাহর পক্ষ থেকে পানাহারের অনুমতি মেলে তখন মানুষের মধ্যে যে আনন্দ ও খুশির জোয়ার উঠে তার প্রকাশ ভাষায় সম্ভব নয়। এটা শুধুমাত্র উপলব্ধির বিষয়। রোজাদার মাত্রই তা উপলব্দি করে থাকে। ইফতারের এ জান্নাতি আনন্দে সারাদিনের কষ্টের কথা সবাই বেমালুম ভুলে যায়। আর হৃদয়ে গেঁথে থাকে প্রভুকে খুশি করার এক অবর্ণনীয় তৃপ্তি।
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেছেন, বান্দা রোজা রাখে আমার জন্য। সে নিজের প্রবৃত্তির চাহিদা ও পানাহার আমার জন্য বর্জন করে। তাই এ রোজার পুরস্কার আমি নিজে দেব। রোজা হলো জাহান্নামের শাস্তির ঢালস্বরূপ। রোজাদারের জন্য দু’টি খুশি। প্রথমটি ইফতারের খুশি। দ্বিতীয়টি আমার সাথে সাক্ষাতের খুশি।’ (বুখারি ৭৪৯২)
সূর্যের গোলক সম্পূর্ণ অদৃশ্য হলে বা অস্ত গেলেই ইফতারের সময় হয়ে যায়। আর ইফতারের সময় হলে বিলম্ব না করে দ্রুত ইফতার করাই ইসলামের নির্দেশ। কেউ যদি অহেতুক বিলম্ব করে অথবা অন্ধকার হওয়ার অপেক্ষা করে অথবা আরো অধিক সওয়াব পাওয়ার উদ্দেশ্যে পানাহার বর্জনের সময়কাল বাড়ানোর জন্য ইফতারকে বিলম্বিত করে তবে সে গুনাহগার হবে।
এমনকি তার রোজা মুসলমানদের রোজা থাকবে না। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, দ্বীন ততোদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে, যতদিন পর্যন্ত মানুষ (সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে) তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে।’ (আবু দাউদ ২৩৫৫)
আবার দেরিতে ইফতার করায় কোনো সওয়াব ও বরকত নেই। কেননা নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ কল্যাণের ওপর থাকবে ততক্ষণ, যতক্ষণ তারা দ্রুত ইফতার করবে।’ (বুখারি ১৯৫৭)
কী দিয়ে ইফতার করবেন?
ইফতারির জন্য নির্দিষ্ট কোনো খাদ্য বা পানীয়কে ইসলাম নির্ধারিত করেননি। নিজেদের খাদ্যাভ্যাস, রুচি ও সামর্থ্য অনুপাতে যে কোনো খাদ্য ও পানীয় দিয়েই ইফতার করার সুযোগ রয়েছে। তবে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইফতারের জন্য খেজুর ও পানিকে সর্বাধিক পছন্দ করেছেন। তিনি বলেছেন, তোমাদের কেউ যখন রোজা রাখবে তখন সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যদি খেজুর না থাকে তাহলে পানি দিয়ে ইফতার করবে। কেননা পানি পবিত্রতা আনায়ন করে।’ (আবু দাউদ ২৩৫৭)
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগরিবের নামাজ পড়ার আগে পাকা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি পাকা খেজুর না থাকতো তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। আর যদি তা-ও না থাকতো তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন।’ (আবু দাউদ ২৩৫৮)
ইফতার দোয়া কবুলে মুহূর্ত
ইফতারের আগের সময়টা অতি মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ। এটা দোয়া কবুলের মোবারক সময়। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া।’ (ইবনে মাজাহ ১৭৫২)
তিনি আরও বলেছেন, ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ ১৭৫৩)
ইফতারের দোয়া
ইফতারের সময় হলে বিসমিল্লাহ বলে ইফতার করতে হয়। দোয়া পড়তে হয়-
اللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلَى رِزْقِكَ أَفْطَرْتُ
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু।
অর্থ: হে আল্লাহ! তোমার জন্য রোজা রেখেছি আবার তোমার দেওয়া রিজিক দিয়ে ইফতার করেছি। (আবু দাউদ ২৩৬০)
ইফতারি শেষ করার পর বলতে হয়-
ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْتَلَّتِ الْعُرُوقُ وَثَبَتَ الأَجْرُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ
উচ্চারণ: জাহাবায যামাউ, ওয়াব-তাল্লাতিল উরূকু, ওয়া সাবাতাল আজরু- ইনশাআল্লাহ।
অর্থ: পিপাসা নিবারিত হয়েছে, শিরা-উপশিরাগুলো সতেজ হয়েছে। আল্লাহ চাহেন তো রোজার সওয়াবও লেখা হয়েছে। (আবু দাউদ ২৩৫৯)
সূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম