শূন্য থেকে ১৪ বছর ও ৬৪ বছরের ঊর্ধ্বের জনগোষ্ঠীকে নির্ভরশীল বলে ধরা হয়। সে হিসেবে দেশে বর্তমানে নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এরা সবাই দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ নিজেরা আয় করতে পারে না, কিন্তু অন্যের আয়ে চলে এসব জনগোষ্ঠী।
যাদের বয়স ১৫ থেকে ৬৪ বছরের মধ্যে তাদের কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে হিসেবে বর্তমানে ১১ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার মানুষকে কর্মক্ষম বলা যায়। অর্থাৎ দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৬৫ দশমিক ২৩ শতাংশই কর্মক্ষম।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপি) ওয়ার্ল্ড পপুলেশন স্টেট অনুসারে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সীদের কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একটি দেশের কর্মক্ষম হিসেবে বিবেচিত জনসংখ্যার মোট পরিমাণ কর্মক্ষম নয় এমন জনসংখ্যার (শিশু ও বয়স্ক জনগোষ্ঠী) তুলনায় বেশি হলে তখন সেই অবস্থাটাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনমিতিক লভ্যাংশ বলে।
অর্থনীতির ভাষায়, দেশের জনসংখ্যার ৬০ শতাংশ যদি কর্মক্ষম হয় তাহলে দেশটি ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ বা জনমিতিক বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ পাওয়ার অবস্থায় রয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। সে হিসেবে বাংলাদেশ এখন ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট বা জনসংখ্যাতাত্ত্বিক লভ্যাংশ অর্জনের পর্যায়ে রয়েছে।
রোববার (০৯ এপ্রিল) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যার ফলাফল প্রকাশ করেছে।
এতে দেখা যায়, জনশুমারিতে গণনার সময় বাদপড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৪৬ লাখ ৭০ হাজার ২৯৫ জন। এ জনগোষ্ঠীকে যোগ দেওয়ার পর দেশে মোট জনসংখ্যা দাঁড়ালো ১৬ কোটি ৯৮ লাখ ২৮ হাজার ৯১১ জন। এর মধ্যে ১৫ থেকে ৬৪ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭ লাখ ৮০ হাজার ১৮ জন। এ পরিমাণ জনগোষ্ঠী দেশে কাজ করতে সক্ষম। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর ৬৫ দশমিক ২৩ শতাংশই কর্মক্ষম।
২০১১ সালের আদম শুমারির তথ্য বিবেচনা করলে দেখা যায়, তখন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৮ কোটি ৭৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৪ জন। ওই সময়ে মোট জনসংখ্যার তুলনায় এটি ছিল ৬০ দশমিক ৬২ শতাংশ। ২০১১ সালের আদম শুমারিতে মোট জনসংখ্যা হিসাব করা হয়েছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৪৩ হাজার ৬৯৭ জন।
স্বাধীনতার পর দেশে কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা ছিল মাত্র মাত্র ২০/২২ শতাংশ। স্বাধীনতার প্রায় ৩৬ বছর পরে ২০০৭ সালে মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১ শতাংশের বয়স এই সীমার মধ্যে উপনীত হয়, বর্তমানে যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। কর্মক্ষম মানুষের এই আধিক্য ২০২৯ সালের পর থেকে কমতে থাকবে। এমন সম্ভাবনা যা কোনো জাতির জীবনে একবার কিংবা কয়েকশ বছরে একবার আসে। চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া- এসব দেশ এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে উন্নত দেশের তালিকায় নাম লিখিয়েছে।
দেশে কর্মক্ষম মানুষের গুরত্বের কথা বিবেচনা করছে বিবিএসও। গতকাল সমন্বয় প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১৫ থেকে ২৯ বয়সী জনগোষ্ঠী ৩২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এরাই আমাদের আগামী দিনের শক্তি। এদের কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব তথ্য প্রকাশ করা। সরকারের অন্য সংস্থাগুলো এদের নিয়ে কাজ করলে, গবেষণা করলে আগামী দিনে ইতিবাচক ফল পাবে। এদের এখনই কাজে লাগাতে হবে। কারণ এরা প্রোডাক্টিভ। এদের নিয়ে ভাবা উচিত।
কোনো দেশের মোট জনসংখ্যার ১৪ শতাংশের বয়স যদি ৬৫ বা তার বেশি হয়, তাহলে সেই দেশকে ‘প্রবীণের দেশ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই হিসেবে ২০৪৭ সালে বাংলাদেশ ‘প্রবীণের সমাজ’ বা ‘প্রবীণ দেশ’-এ রূপান্তরিত হবে।
এখন দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে ষাটোর্ধ্ব জনগোষ্ঠী ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর ৬৫ বছরের ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর হার ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। ২০৫০ সালে ষাটোর্ধ্ব মানুষের হার দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর তখন ৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষের হার দাঁড়াবে মোট জনসংখ্যার ২১ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ দেশে প্রায় ৩৮ শতাংশ মানুষ হবে ষাটোর্ধ্ব। ২০৬০ সালে বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে বেশি বয়সী জনসংখ্যার সপ্তম বৃহত্তম দেশ।
অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০২৯ সালে প্রবীণমুখিতার পর্যায়ে পৌঁছাবে। ‘বৃদ্ধ বা প্রবীণ’ পর্যায়ে রূপান্তরিত হতে বাংলাদেশের মাত্র ১৮ বছর লাগবে। এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ যে গতিতে ‘বয়স্ক’ থেকে ‘বার্ধক্য’ পর্যায়ে পৌঁছাবে তা উন্নত এশীয় ও সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোর গতির চেয়ে বেশি হবে। এই রূপান্তরে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত রূপান্তরশীল সমাজ হবে। উন্নতির অনেক নিচের ধাপে থেকে জনসংখ্যা-রূপান্তরের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দেশের সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যা হলো ১৬ কোটি ৯৮ লক্ষ ২৮ হাজার ৯১১ জন। সমন্বয়কৃত মোট জনসংখ্যার ৬৮.৩৪ শতাংশ পল্লিতে এবং ৩১.৬৬ শতাংশ শহরে বাস করে।
রোববার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সভাকক্ষে পিইসি জরিপের আলোকে জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ এর সমন্বয়কৃত জনসংখ্যা প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)
সূত্র : জাগোনিউজ২৪.কম