জেলায় কৃষকেরা দিন দিন বোরো আবাদের দিকে ঝুকছে। গত এক দশকে এ জেলায় ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে বোরো ধানের আবাদ। গত দশ বছরে জেলায় বোরো আবাদ বেড়েছে দশ হাজার হেক্টর জমিতে। বর্তমানে সবুজ ধান গাছ দুলছে ফসলি জমিতে। এবছরও বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষক-কৃষাণীরা। তাইতো কৃষকের চোখে মুখে এখন আনন্দের হাসি।
নড়াইল কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি এ দু মাস জুড়ে বোরো ধানের চারা জমিতে রোপণ করতে হয়। এপ্রিল-মে মাসে জমি থেকে পাকা ধান কৃষকেরা ঘরে তোলে। দশ বছর পূর্বে ১২-১৩ অর্থ বছরে জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল তিন হাজার নয় শত নব্বই হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ২২-২৩ অর্থ বছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল পঞ্চাশ হাজার হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে পঞ্চাশ হাজার পঁচিশ হেক্টর জমিতে। হিসের অনুযায়ী দশ বছরে জেলার বোরো আবাদ বেড়েছে দশ হাজার হেক্টর জমিতে। সে হিসেবে মাত্র এক দশকে বোরা আবাদ বেড়েছে অন্তত পঁচিশ শতাংশ।
জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নড়াইলের তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় সবচেয়ে বেশি বোরো আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে জেলার কাড়ার বিল, নলদিরচর বিল, মরিচপাশার বিল, চাচই বিল, আকদিয়ার বিল, রুইয়ের বিল, কৈয়ের বিল, ভাটিয়ার বিল, খলিয়ার বিল, হবশাৎরার বিল, মুলিয়ার বিল, আইড়োর বিল, বিল ইছামতির বিল, নুন জলার বিল, নলাবিল, মাইজ পাড়ার বিলসহ জেলার বিভিন্ন বিলে বোরোর আবাদ বেশি হয়েছে।
নড়াইল সদর উপজেলার মহিষখোলা গ্রামের আকরাম মোল্যা জানান, পূর্ব পুরুষ থেকে তার পরিবার কৃষি কাজের সাথে জড়িত তারা বোরো আবাদ করে । চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় এক একর জমিতে বোরো আবাদ করেছে। আশা করছেন ভালো ফলন হবে।
লোহাগড়া উপজেলার সরশুনা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, আগে এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে বিশ মণ ধান হত। এখন এক বিঘা জমিতে ত্রিশ থেকে পয়ত্রিশ মণ ধান পাওয়া যায়। সেই জন্য তিনি বোরো আবাদ বাড়িয়েছেন।
রায়গ্রামের কৃষক আওয়াল হোসেন জানান, খালে পানি না থাকায় কয়েক বছর আগে তারা জমিতে বোরো আবাদ করতে পারতেননা। তখন বছরে দুটি ফসল হত। খাল খননের ফলে বর্তমানে তারা জমিতে বছরে তিনটি ফসল ফলান। এখন তিনি জমিতে বোরো আবাদ করতে পারেন।
কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি গ্রামের কৃষক আফজাল বলেন, আগে বিদ্যুৎ এর অভাবে সেচ দেওয়া যেতনা। তখন পাম্প বন্ধ রাখতে হত। এখন আগের তুলনায় বেশি সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ক্ষেতে পানি দিতে তেমন কোন সমস্য হয়না। যার কারণে বোরো আবাদ বেড়েছে।
নড়াইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ দীপক কুমার রায় বলেন, উন্নত মানের বীজ সরবরাহ, সময়মত বীজ, সার ও কীটনাশক পাওয়ায় গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকভাবে নড়াইলে বোরো আবাদ বাড়ছে। বর্তমানে বোরো ক্ষেতে সবুজ ধান গাছ দুলছে। আশা করছি এ বছর বোরো আবাদে বাম্পার ফলন পাবে জেলার কৃষকেরা। বোরো আবাদ বৃদ্ধি করার জন্য চলতি মৌসুমে জেলার ২২ হাজার কৃষদের মাঝে উন্নত জাতের বীজ ও সার বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, সব ঠিক থাকলে এবছর জেলায় দুই লক্ষ বিশ হাজার সাত শত ত্রিশ মেট্টিক টন ধান উৎপাদন হবে বলে আশা করেন তিনি।
সূত্র :বাসস