দ্রুতগতিতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল একটি কালো রঙের প্রাইভেট কার। পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেলচালক চেষ্টা করছিলেন গাড়িটিকে ধরতে। যানজটের কারণে গাড়ির গতি কমাতে হয়। তখন গাড়ির চালক বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় পেছন থেকে অনেকেই জোরে বলতে থাকেন ‘গাড়িটিকে আটকান, ড্রাইভারকে ধরুন’। গাড়িটিকে আটকানো হয়। তখন গাড়ির মধ্যে চুপচাপ বসে ছিলেন তরুণ চালক। পরে দেখা গেল তাঁর পাশের আসনের পা রাখার জায়গায় অচেতন হয়ে পড়ে আছেন এক তরুণী। সেই তরুণীর কোনো সাড়াশব্দ নেই।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার রাত পৌনে ৯টার দিকে রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়া মোড়ে। গাড়িটি রামপুরা থেকে মালিবাগের পথে আসছিল। চৌধুরীপাড়া মোড়ে এসে যানজটের কারণে সেটি আটকা পড়ে। পরে ওই গাড়ি থেকে তরুণীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। আর তরুণ চালককে নেওয়া হয় হেফাজতে। মেয়েটিকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ওই তরুণ ও তরুণী দুজনই এখন সুস্থ আছেন বলে পুলিশের খিলগাঁও অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার রাশেদুল ইসলাম জানিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের পরিবারকে খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনেরা এলে দুজনকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
তরুণ-তরুণীর নাম-পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের ধারণা, ওই তরুণ-তরুণী ঢাকার কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন। তাঁদের বয়স ২৪-২৫ বছর হবে। উপকমিশনার রাশেদুল বলেন, ‘আমরা ছেলেটিকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কিন্তু সে অ্যাবনরমাল আচরণ করছে। একই অবস্থা মেয়েটির। কী হয়েছিল, কেন ছেলেটি পালাতে চাচ্ছিল, সেটা এখনো জানা যায়নি।’
ওই তরুণীর কী হয়েছিল, সে প্রশ্নের জবাবে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘কী হয়েছে, তা ডাক্তাররা ভালো বলতে পারবেন। আমরা এখনো ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।’
ঘটনা যা দেখা গেল
রাত সাড়ে ৮টার পরপর রামপুরা বাজার পার হলে বেশ লম্বা যানজটে পড়তে হয়। অনেক প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে। এর মধ্যেই একটি কালো রঙের প্রাইভেট কার সামনের মোটরসাইকেলকে সজোরে ধাক্কা দেয়। পেছন থেকে সঙ্গে সঙ্গে একজন নারী বলতে শুরু করেন, ‘এই গাড়ির ড্রাইভারের কি চোখ নেই, আমাদের মেরে ফেলবে?’ এই প্রতিক্রিয়ার কারণে তাঁদের রিকশাকেও ধাক্কা দিয়ে সামনে এসেছে প্রাইভেট কারটি।
এ সময় মোটরসাইকেল থেকে দুজন নেমে প্রাইভেট কারের চালকের সঙ্গে কথা বলতে থাকেন। গ্লাস নামাতে বলেন। আরও কয়েকজন গাড়িটিকে ঘিরে ধরলেও চালক সেদিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। যদিও মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিয়ে তাঁর গাড়িটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রাইভেট কারটির সামনের বাম্পার ভেঙে ঝুলছিল। এর মধ্যে সিগন্যাল ছেড়ে দিলে প্রাইভেট কারটি এগোতে থাকে।
কালো রঙের প্রাইভেট কারটি দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগোতে থাকে। বাঁ পাশ দিয়ে কোনো গাড়িকে সামনে যেতে দিচ্ছিল না। পেছন থেকে ধাক্কা খাওয়া মোটরসাইকেলটির চালক সামনে আসার চেষ্টা করলেও পারছিলেন না। এর এক পর্যায়ে পেছন থেকে সবাই বলা শুরু করেন, ‘ওই গাড়িটিকে আটকান। পালাচ্ছে।’ এ সময় প্রাইভেট কারটি খিলগাঁওয়ের দিকে বাঁক নেওয়ার ঠিক আগে একটি রিকশার কারণে আটকে যায়। চেঁচামেচি শুনে একটি ছেলে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান।
এ সময় দৌড়ে এসে এক যুবক ওই প্রাইভেট কারের চালককে গ্লাস নামাতে বলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি গ্লাস নামান। এ সময় পেছনে থেকে এক নারী বলেন, ‘ভাই, ওনার সঙ্গে একজন নারী আছেন, কী হয়েছে ওই নারীর?’ কিন্তু গাড়িতে কোনো নারীকে দেখা যাচ্ছিল না। পাশে দাঁড়ানো একটি মিনিট্রাকের কয়েকজন যাত্রীও বলেন, ওই গাড়িতে একজন মেয়ে পড়ে আছে।
তখন একটি মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে প্রাইভেট কারটির ভেতর দেখা হয়। কিন্তু কোনো আসনে কেউ নেই। কিছুক্ষণ পর চালকের পাশের আসনে পা রাখার জায়গায় এক তরুণীকে কুঁকড়ে থাকতে দেখা যায়। দেখে পাশ থেকে একজন বলেন, ‘মেয়েটি কি মারা গেছে?’ পাশ থেকে সবাই জিজ্ঞাসা করতে থাকেন মেয়েটি কে? মেয়েটি অচেতন, সাড়াশব্দ নেই।
এ সময় চালকের আসনে বসা ওই তরুণ মেয়েটির মুখ ঝাঁকিয়ে বারবার বলতে থাকেন, ‘জান গেট আপ প্লিজ। জান গেট আপ।’ বারবারই তিনি মেয়েটির মুখ ধরে ওঠানোর চেষ্টা করছিলেন। প্রতিবার একই কথা বলছিলেন। কিন্তু মেয়েটির কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। এর মধ্যে একসময় পুলিশ সেখানে চলে আসে। মেয়েটিকে বের করে হাসপাতালে পাঠানোর পাশাপাশি গাড়িসহ চালককে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
সূত্র : প্রথম আলো