• বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
ভারতকে বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে: খেলাফত মজলিস বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে বিএনপির বিক্ষোভ সীমান্তে যে কোনো অপতৎপরতা রোধে প্রস্তুত বিজিবি ভারতকেই শান্তিরক্ষা বাহিনীর সহায়তা নেওয়ার কথা বললেন উপদেষ্টা আসিফ চিন্ময়ের পক্ষে ছিলেন না আইনজীবী, জামিন শুনানি পেছালো দুর্নীতির শীর্ষে পাসপোর্ট-বিআরটিএ-আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা : টিআইবি সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নেই, সংস্কার আমরা করবো বাতিল হলো বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ বিধান আইন মেডিকেলে ভর্তিতে ‘অটোমেশন’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ

গোপালগঞ্জে বিনাধান ২৫ আবাদে সাফল্য

24live@21
আপডেটঃ : সোমবার, ৮ মে, ২০২৩

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) উদ্ভাবিত বিনাধান-২৫। এ ধান কৃষকের আয় দ্বিগুণ করতে সক্ষম। গোপালগঞ্জে এ বছর প্রথমবারের পাকিস্তান বা ভারতের বাসমতি টাইপের অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু ধানের আবাদে সফল্য মিলেছে । চলতি বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জে ১২ টি প্রদর্শনী প্লটে ১২ একর জমিতে এ ধানের চাষাবাদ হয়েছে ।

বিনা উদ্ভাবিত প্রিমিয়াম কোয়ালিটির বিনাধান-২৫ জাতের ধানের ক্ষেতে শুধু ধান আর ধানের সমরোহ। এ ধানের ক্ষেতের ধান দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। ধানের বাম্পার ফলন দেখে লাভজনক এ ধানের চাষাবাদ সম্প্রসারণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন গোপালগঞ্জের কৃষক।

তাই বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) আগামী বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জের ২ হাজার কৃষককে দিয়ে এ ধানের আবাদ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।

বিনা গোপালগঞ্জ উপকেন্দ্রের ইনচার্জ ও উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, দেশের চাহিদা অনুসারে সরু ও চিকন (প্রিমিয়াম কোয়ালিটি) চাল অপ্রতুল। বিদেশে রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ বিনাধান-২৫ উদ্ভাবন করেছে। ২০২২ সালের ১৮ অক্টোবর বিনাধান-২৫ জাত অবমুক্ত করা হয়। তারপর আমরা গোপালগঞ্জে মাঠ পর্যায়ে কৃষককে নিয়ে এ ধানের আবাদ করাই। গোপালগঞ্জে প্রতি হেক্টেরে এ ধান অন্তত ৮ টন ফলন দেবে বলে ক্ষেতের ধান দেখে ধারণা করছি। বিনাধান-২৫ এর চাল বিদেশে রপ্তানিযোগ্য। এ চাল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখবে। এ চাল পাকিস্তান বা ভারত থেকে বাসমতি চাল আমদানি নির্ভরতা কমাবে।

প্রতি কেজি ধান কমপক্ষে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হবে। বিনাধান-২৫ কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দেবে। তাই এ ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হবেন।

বিনাধান-২৫ এর গবেষক ড. সাকিনা খানম বলেন, ৮ বছর গবেষণার পর এ সাফল্য এসেছে। বিনাধান-২৫ মূলত ব্রি ধান-২৯ এর বীজে জাপানের একটি ল্যাবে ৪০ গ্রে মাত্রার কার্বন আয়রন রশ্মি প্রয়োগ করে উদ্ভাবন করা হয়েছে। যা চেকজাত ব্রি ধান ৫০ থেকে ১০ শতাংশ ফলন বেশি দিতে সক্ষম। প্রিমিয়াম কোয়ালিটির এ ধান আগাম পাকে। চাষাবাদের ১৩৮ থেকে ১৪৮ দিনেই এ ধান ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা যায়। বিনাধান-২৫ ব্রি ধান-২৯ এর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগে পাকে। এ ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি সাড়ে ৭ মেট্রিক টন থেকে সাড়ে ৮ মেট্রিক টন। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ধানের জাতের মধ্যে বিনাধান-২৫ সর্বাধিক লম্বা ও সরু আকৃতির। জমিতে পানি জমে থাকা বা বৈরী আবহাওয়ায় প্রচ- ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে ধান গাছ সাধারণত সাময়িক হেলে পড়। পরে জমি থেকে পানি সরে গেলে এবং রৌদ্রোজ্জ্বল অবস্থায় বিনাধান-২৫ জাতটি ২-৩ দিনের মধ্যে পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক ফলন দেয়। এর ধানের চলের ভাত ঝরঝরে ও খেতে সুস্বাদু।

ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, এধানে রোগ ও পোকার আক্রমণ নেই বললেই চলে। এ ধান চাষে পানি কম লাগে। ইউরিয়া সার সাশ্রয়ী। এ জন্য বিনাধান-২৫ কে ইউরিয়া, পানি ও বালাইনাশক সাশ্রয়ী জাত বলা যায়। ধানের গাছ লম্বা বেশি। তাই কৃষক প্রচুর খড় পাবেন । এ জাতের চাষাবাদ সম্প্রসারিত হলে গো-খাদ্যের সংকট নিরসন হবে । এটি যেমন প্রিমিয়াম কোয়ালিটি, অল্প জীবনকাল সম্পন্ন আবার ফলনও বেশি দেয়। তাই কৃষক এ ধান চাষে দ্বিগুণ লাভবান হবেন।

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, এ পর্যন্ত বিনার বিজ্ঞানীরা ২৬টি ধানের জাত আবিষ্কার করেছেন। এর মধ্যে বিনা ধান-২৫ অতি লম্বা ও সবচেয়ে সরু ধানের জাত। বিশেষ করে এ জাতটি বিদেশে রপ্তানিযোগ্য প্রিমিয়াম কোয়ালিটির চাল দেবে। পাকিস্তান বা ভারতে এ ধরনের বাসমতি টাইপের জাত আছে। এ ধানের বাজারমূল্য প্রচলিত যেকোন ধানের জাতের তুলনায় কৃষক অনেক বেশি পাবেন।

বিনার প্রধান আরও বলেন, আমরা কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ, রপ্তানিমুখী ও প্রযুক্তি নির্ভর করব। আমদানি নির্ভরতা কমাতে ও কৃষকের আয় দ্বিগুণ করে দিতে চাই। সেই জায়গায় বিনাধান-২৫ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ ধান আবাদ করলে কৃষক দ্বিগুণ লাভ করতে পারবেন। তাই আমরা গোপালগঞ্জের ২ হাজার কৃষককে দিয়ে আগামী বোরো মৌসুমে এ ধানের আবাদ করাবো। সেই ভাবেই আমরা পরিকল্পনা গ্রহন করেছি। এ ধানের আবাদ করে কৃষক ব্যাপক লাভবান হবেন। কৃষি আধুনিক ও আরো সমৃদ্ধ হবে।

মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক মোঃ বাচ্চু শেখ বলেন, আমি কৃষি প্রণোদনা পেয়ে ১০০ শতাংশ জমিতে এ ধানের আবাদ করেছি। এ ধানে রোগ বালাই নেই। সেচ ও সার কম লেগেছে। ধান অতি লম্বা ও সবেচেয়ে সরু । আমি আগামী বছরের জন্য এ ধানের বীজ সংরক্ষণ করব। আমার ক্ষেতে ধানের সমারোহ দেখে অনেক চাষি এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

একই গ্রামের কৃষক বশার সিকদার বলেন, আমাদের গ্রামের মাঠে ব্রিধান-২৮সহ বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ও উচ্চ ফলশীল ধানের চাষ হয়েছে। এসব জাতের ধানের চেয়ে বিনাধান-২৫ মোঃ বাচ্চু শেখের ক্ষেতে অনেক বেশি ফলন দিয়েছে। ওই ক্ষেতে শুধু ধান আর ধান। এ ক্ষেত যে দেখছে, সেই এ ধান সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করছে। বাজারে এ ধান প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে বিক্রি হবে। আগামী বছর আমিও লাভজনক এ ধানের চাষ করব।

সূত্র : বাসস


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ