• মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম:
সংস্কার নিয়ে কারও চিন্তা করার দরকার নেই, সংস্কার আমরা করবো বাতিল হলো বিদ্যুৎ-জ্বালানির বিশেষ বিধান আইন মেডিকেলে ভর্তিতে ‘অটোমেশন’ বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন খালেদা জিয়ার সঙ্গে তারেকের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টার সাক্ষাৎ ‘চিত্রকর্মগুলো তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীলতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ’ জেনেভায় আসিফ নজরুলকে হেনস্তা, মিশনের শ্রম কাউন্সেলরকে ‘স্ট্যান্ড রিলিজ’ মা নেই, কারাগারে বাবা : শিশুদের দেখভাল করতে হাইকোর্টের নির্দেশ সংস্কারের গতি ঠিক করবে নির্বাচন কত দ্রুত হবে : এএফপিকে প্রধান উপদেষ্টা সাগর-রুনি হত্যার ৩২০১ পৃষ্ঠার নথি পেয়েছে পিবিআই সম্প্রীতি বজায় রাখতে সেনাবাহিনী সদা প্রস্তুত: সেনাপ্রধান

সুনামগঞ্জে ‘ধানে ধনী’ হাওরের কৃষক

24live@21
আপডেটঃ : বৃহস্পতিবার, ১১ মে, ২০২৩

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বোরো ধানের ফলন খুব ভালো হয়েছে। এবার বৃষ্টি বা পাহাড়ি ঢলে ফসলের ক্ষতি হয়নি।

সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে। দুপুরের তপ্ত রোদ নেই। ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী মানুষ। কৃষক মাহমুদ আলীর দুই ছেলে হাবিবুল ও খায়রুল বস্তা ধরে আছে। সেই বস্তায় ধান ভরছেন তিনি। পাশেই ধান ঝেড়ে চিটা আলাদা করে ফেলছেন মাহমুদ আলীর স্ত্রী জবা বেগম। সারা দিন কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেও সবার মুখে তৃপ্তির ছাপ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার নির্বিঘ্নেœ হাওরের ধান তুলতে পারছেন তাঁরা। ফলনও ভালো হয়েছে। এসব কারণে ভীষণ খুশি তাঁরা।

মাহমুদ আলী ও জবা বেগম দম্পতির বাড়ি শনির হাওরপারের সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ছিকসা গ্রামে। গত সোমবার বিকেলে কথা হয় জবা বেগমের সঙ্গে। জবা বেগম বলছিলেন, সেই ছোটবেলা থেকে হাওরে বৈশাখী ধান তোলেন। বাবার বাড়ি, বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি—সবখানেই ধান তোলার কাজ করেছেন। কৃষক পরিবারের নারীদের এই কাজে কষ্টের চেয়ে আনন্দটাই বেশি। জবা বেগমের ভাষায়, ‘ধানই ত আমরার সব। ধান পাইলে সারা বছর ঘরও খুশি থাকে। ধান না পাইলে বড় কষ্টে দিন যায়। এই কষ্ট আমরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝত না।’

জবা বেগমের স্বামী মাহমুদ আলী ধানের ফলন বেশি হওয়ায় খুশি। ধানের ফলন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিনি ১০ কিয়ার (৩০ শতাংশে ১ কিয়ার) জমিতে বোরোর আবাদ করেছিলেন। সাড়ে ছয় কিয়ার জমির ধান কাটা, মাড়াই ও শুকানোর পর গোলায় তুলেছেন। সব মিলিয়ে ১৫০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন। গত বছর একই জমিতে ধান পেয়েছিলেন ৭৫ মণ। গতবার শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হওয়ায় ধান কম পান তাঁরা। বছরে তাঁর ঘরের খাবার ও অন্যান্য খরচ চালাতে ৬০ মণ ধান লাগে।

মাহমুদ আলীর পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে আছেন। দুই মেয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছেলেরা বিদ্যালয়ে পড়ে। সন্তানদের লেখাপড়া, সংসারের যাবতীয় খরচ—সবই হয় ধান বিক্রির টাকা দিয়ে। মাহমুদ আলী বলেন, ‘ধান পাইলে আমরা ধনী, না পাইলে ফকির। ইবার ধান ভালা অইছে, এর লাগি সবাই খুশি।’

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতি না হওয়ায় এবং ফলন ভালো হওয়ায় মাহমুদ আলীর পরিবারের মতো সুনামগঞ্জের লাখো কৃষক পরিবারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তারা খেত থেকে উৎসবের আমেজে ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলার হাওরপারের কয়েকজন কৃষক বলেন, ২০১৭ সালে হাওরে ব্যাপক ফসলহানির পর এবার কোনো ঝামেলা ছাড়াইœ ধান গোলায় তুলতে পারছেন তাঁরা। গত বছরের এপ্রিলেও পাহাড়ি ঢলে বেশ কয়েকটি হাওরে ফসলহানি ঘটে। এরপর জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় গোলায় রাখা ধানও নষ্ট হয়ে যায়। তাই কয়েক বছর পর এবারই প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধান পেয়েছেন কৃষকেরা। তাই হাওরজুড়ে অন্যরকম এক উৎসব চলছে। দিনরাত ব্যস্ত হাওরের কৃষক পরিবারের লোকজন।

হাওর থেকে হারভেস্টার দিয়ে ধান কেটে ও মাড়াই করে এনে একেবারে জমির পাশে প্লাস্টিকের চটের ওপর রাখা হয়েছে। সেই ধান বস্তায় ভরছিলেন ছিকসা গ্রামের কৃষক গোলাম মস্তফা (৫৫)। এবার তিনি আট কিয়ার জমিতে ঝলক ও ছক্কা জাতের ধান লাগিয়েছিলেন। ধান পেয়েছেন ১৩০ মণের মতো।

গত বছর লাগিয়েছিলেন ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান। ধান পেয়েছিলেন মাত্র ৪৫ মণ। এবারও যাঁরা এই দুই জাতের ধান লাগিয়েছেন তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। মস্তফা বলেন, ‘ইবার আমি যে ধান পাইছি, তা দিয়া তিন বছর খাইতাম পারমু। আমার লাগান অনেকেই পাইছে। ইবার ধান অইছে বেশি। দিনও ভালা, কোনো ঝামেলা নাই।’

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার ১৫৪টি ছোট–বড় হাওর ও বিলে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এ পর্যন্ত ৮৭ ভাগ জমির (১ লাখ ৯১ হাজার হেক্টর) ধান কাটা হয়েছে। হাওরে ধান কাটা শেষ হতে আরও ১৫ দিন লাগবে। এবার ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন আরও ১০ হাজার মেট্রিক টন বেশি হবে। ৩০ টাকা কেজি ধরে উৎপাদিত এই ধানের মূল্য ৪ হাজার কোটি টাকার ওপরে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম গত মঙ্গলবার বিকেলে বলেন, জেলায় চার লাখ কৃষক পরিবার আছে। সবাই এখন হাওরে ধান সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত। হাওরে ধান কাটার জন্য শ্রমিকদের সঙ্গে ৭৭৬টি হারভেস্টার রয়েছে। এ কারণে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুনামগঞ্জের হাওরজুড়ে এখন বোরো ধান গোলায় তোলার উৎসব চলছে। কৃষক পরিবারে এটি যে কী আনন্দের, সেটি না দেখলে বোঝা যাবে না। আমরা সব সময় কৃষকের মুখে এই হাসিই দেখতে চাই।’

সূত্র : প্রথম আলো


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ