বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বাড়াতে তদারকির ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি বিদেশ থেকে প্রতিশ্রুত অর্থের প্রাপ্তি ও তার ব্যবহার বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভর্তুকি কমানোরও তাগিদ দিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনি নতুন বাজেটে কৃচ্ছ্রসাধন নীতি অবলম্বনের পক্ষে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গত বুধবার রাতে ঢাকায় গণবভনে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের সারসংক্ষেপ তুলে ধরলে তিনি এসব নির্দেশনা দেন বলে জানা গেছে। আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে নতুন বাজেট উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।
গণভবনের বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমসহ অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগ ও এনবিআরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আগামী অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার বাজেট তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে এক লাখ কোটি টাকার বেশি রাখা হচ্ছে ভর্তুকি বাবদ। দেশি-বিদেশি সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। আগামী বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতির হার ধরা হবে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী অহেতুক ব্যয় করা যাবে না বলে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি আমলাদের বিদেশ ভ্রমণের ফাইলও যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দিতে বলেছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়ার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বৈধপথে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) সংগ্রহের উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ ছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে দেওয়া বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যয় করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সূত্র জানায়, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা যে আগামী অর্থবছরের অন্যতম চ্যালেঞ্জ, তা উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কথা তুলে ধরেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধীদের কারও কারও ভাতা বাড়ানো হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে উপকারভোগীর সংখ্যাও। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য চলমান রাখা হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির ব্যবস্থা।
প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর করে এসেছেন। বাজেট নিয়ে আলোচনার ফাঁকে এ সফরের প্রসঙ্গও উঠেছে বলে সূত্রগুলো জানায়।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একটি সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের প্রস্তুতি একরকম নিয়ে রাখা আছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর এখন সামান্য এদিক-সেদিক হবে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতার কোনো প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেননি অর্থমন্ত্রী। এ নিয়ে কোনো আলোচনাও হয়নি।
আরেকটি সূত্র বলেছে, গত ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের বিপরীতে যেসব শর্ত পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেগুলো যতটা সম্ভব আগামী বাজেটে পূরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সূত্র :প্রথম আলো