বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ ব্রি-১০২ জাতের নতুন ধান খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর পাশাপাশি কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে। এরই মধ্যে গোপালগঞ্জে ধানটির পরীক্ষামূলক চাষে মিলেছে সাফল্য। প্রতি শতাংশে এই জাতের ধান প্রায় ১ মন ফলন দিয়েছে। ব্রি ধান-১০২ চাষে কৃষকের গোলা ভরে যাবে। নতুন জাতের এই ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। জাগিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।
গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শনী প্লটে এই জাতের ধান হেক্টরে ৮ দশমিক ১০ থেকে ৯ দশমিক ৫ টন পর্যন্ত ফলন দিয়েছে । সেই হিসেবে শতাংশে ফলন দিয়েছে প্রায় ১ মন বা ১ মনেরও বেশি। ব্রি ধান-২৯ এর বিকল্প হিসেবে এই ধানের আবাদ করা যায়। হাইব্রিড ধানের সমান এই ধান ফলন দিতে সক্ষম। নতুন এই জাতের ধানে প্রচলিত জাতের ধানের মতো রোগ-বালাই নেই। লম্বা ও চিকন জাতের জাতের এই ধানের ভাত ঝরঝরে এবং খেতে সুস্বাদু। স্বল্প খরচে ধানের বাম্পার ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হবেন ।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান ও উর্ধ¦তন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়েছেন।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ওই গবেষক বলেন, ২০২২ সালে বীজ বোর্ড এই বীজধান ছাড় করে। এই বছর বোরো মৌসুমে গোপালগঞ্জের ৫টি প্রদর্শণী প্লটে প্রথমবারের মতো এই ধানের আবাদ করেন কৃষক। চিকন ধানের জাতের মধ্যে এই জাতই সর্বোচ্চ ফলন দিয়েছে। চিকন ধানে এটি নতুন আশা জাগিয়েছে। চিকন ধান বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি হয়। এটি আমাদের কৃষি ও কৃষকরে জন্য সুসংবাদ। এই জাতের ধান এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে। এই ধানের চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশ ধানে আরো বেশি সমৃদ্ধ হবে। কৃষকের আয় বড়িয়ে দেবে এই জাতের ধান ।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গোপালগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সৃজন চন্দ্র দাস বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত একটি ক্লাইমেট স্মার্ট জাত ব্রি ধান১০২। বোরো মৌসুমের এই ধানটি জিংক সমৃদ্ধ। কারণ মাছে-ভাতে বাঙ্গালীর ধানেই সমৃদ্ধি।এই সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে ব্রি ধান১০২ । এটি আমাদের প্রত্যাশা।
টুঙ্গিড়পাড়া উপজেলার রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক মুহিব শেখ (৫০) বলেন, লম্বা ও চিকন জাতের ব্রি ধান-১০২ আমার প্রদর্শনী প্লটে সবচেয়ে বেশি ফলন দিয়েছে। আমি জীবনে চিকন ধানে এত বেশি ফলন দেখিনি। এই ধানে রোগ-বালাই নেই বললেই চলে। আমার জমিতে শুধু ধান ছাড়া আর কিছুই দেখা যায়নি। এমন ধান কৃষক, পখচারীসহ সবাইকে মুগ্ধ করেছে।
অনেক কৃষকই এই ধান দেখে ভবিষ্যতে চাষাবাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা আমরা কাছে এই ধানের বীজ চাইছেন। এই ধান লম্বা ও চিকন। তাই বাজারে মোটা ধানের তুলনা মনে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি দাম পাওয়া যাবে। এই ধান চাষ করে গোলা ভরবে। অধিক ফলন পেয়ে আমরা লাভবান হতে পারব। এই ধান আমাদের জন্য নতুন দিশা হয়ে এসেছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, ‘প্রতি বছর আমাদের জনসংখ্যার সঙ্গে ২০-২২ লাখ লোক যোগ হচ্ছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার এ দেশে খাবারের নিশ্চয়তা দিতে হলে অবশ্যই ব্রি উদ্ভাবিত নতুন জাতের উফশী ধানগুলো চাষ করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। ‘কেননা, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত নতুন জাতগুলোর ফলন আগের পুরনো জাত ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯-এর চেয়ে অনেক বেশি। এগুলো যদি ভালো পরিচর্যা করা যায়, তাহলে আরও বেশি ফলন পাওয়া সম্ভব। কাজেই এখন পুরনো জাত বাদ দিয়ে নতুন জাতের ধান ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২, বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং ব্রি-১০২ চাষ করতে হবে। উপরন্তু বঙ্গবন্ধু-১০০ এবং ব্রি-১০২ চিকন, উচ্চজিংকসমৃদ্ধ, জিরা টাইপের, যা আমাদের পুষ্টির চাহিদাও পূরণ করবে। এগুলো প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ধান হওয়ায় বাজারমূল্যও অন্য ধানের তুলনায় বেশি।’
গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গোপালগঞ্জ খামার বাড়ির উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুল কাদের সরদার বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও উদ্বৃত্ত। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় উচ্চফলনশীল (উফশী) জাতের পাশাপাশি পুষ্টিসমৃদ্ধ ধান উৎপাদনে বিশেষ নজর দিয়েছে।
বাংলাদেশর মানুষ ভাত খেতে অভ্যস্থ। তাই ভাতের মধ্যে পুষ্টিগুন থাকলে সহজেই মানুষ পুষ্টি পাবে। ব্রি উদ্ভাবিত জিংক সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ ও ব্রিধান-১০২ জাতর ধানের চাষাবাদ আমরা সম্প্রসারণ করবো। এতে একদিকে যেমন কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হবেন, তেমনি দেশের সাধারণ মানুষের পুষ্টির ঘাটতি পুরণ করবে এই ধান। এই ধান উদ্ভাবনে সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
সূত্র : বাসস