কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের আমের চাষ গোপালগঞ্জে বাড়ির আঙ্গিনায় সম্প্রসারণ করেছে কৃষি গবেষণা স্থাপন প্রকল্প।
ওই প্রকল্প থেকে গত ৫ বছরে গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় অন্তত ৩ লাখ আমের চারা কৃষক পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণকৃত আমের চারার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল বারি আম-৪, বারি আম-৩ ও বারি আম-১১। বিতরণকৃত ৩ লাখ চারার মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার গাছে এ বছর আম ধরেছে। বাদবাকী গাছে আগামী ১ বছরের মধ্যে আম ধরবে। বাড়ির আঙ্গিনার আম গাছে উৎপাদিত আম কৃষকের পারিবরিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করছে। বাড়তি আম কৃষক বিক্রি করে টাকা রোজগার করছেন। এতে তাদের একদিকে যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হচ্ছে, অন্যদিকে আম বিক্রি করো রোজগার করছেন টাকা।
৫ বছর আগে গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআই এর কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করণের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করে কৃষি মন্ত্রণালয়। এ প্রকল্পে আমসহ ফল উৎপাদনে পশ্চাৎপদ গোপালগঞ্জ জেলায় ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি ও পুষ্টির চাহিদা মেটানোই এ প্রকল্পের অন্যতম উদ্যেশ্য ছিল। সেই লক্ষ্যে বাড়ির আঙ্গিনায় ফলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য এ প্রকল্প থেকে কৃষক প্রতি ৫টি করে আমের চারা বিতরণ করা হয়। চলতি বছরের ৩০ জুন এ প্রকল্পের মেয়াদ সমাপ্ত হয়েছে।
গোপালগঞ্জে কৃষি গবেষণা স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. এম.এম কামরুজ্জামন জানান, জলাভূমি (বিল) বেষ্টিত গোপালগঞ্জ জেলায় ফলের আবাদ কম। এখানে ফলের উৎপাদনও তেমন ছিল না। এ জেলার প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ফলের পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। তাই এ জেলায় ফলের আবাদ বৃদ্ধির জন্য আমরা বিগত ৫ বছরে এ প্রকল্প থেকে ৩ লাখ আমের চারা বিতরণ করেছি। এখন জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চফলনশীল জাতের আমের গাছ রয়েছে। এসব গাছের মধ্যে অন্তত দেড় লাখ গাছে এ বছর আম ধরেছে। আগামী বছর বাদবাকী গাছে আম ধরবে। এসব গাছের আম খেয়ে অনেক পরিবার পুষ্টির চাহিদা পূুরণ করছে। আবার অনেক পরিবার পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি আম বাজারে বিক্রি করছেন। এতে এ প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এইচএম খায়রুল বাসার বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার জন্য উপযোগী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল আমের জাত বারি আম-৪, বারি আম-৩ ও বারি আম-১১। এ গাছ বিতরণের সময় কৃষকদের আমরা রোপণ ও পরিচর্যা পদ্ধতির ওপর প্রশিক্ষণ দিয়েছি। এ ৩ জাতের আমই বাড়ির আঙ্গিনায় সবচেয়ে বেশি সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এছাড়া আমের হপার পোকা, এন্থাক্সনোজ ও অন্যান্য পোকা দমনে আমরা কৃষকদের পরামর্শ এবং সহযোগিতা করেছি। এ কারণে গোপালগঞ্জে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার মানুষ সস্তায় আম খেতে পারছেন।
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার পাটাগাতী সাহাপাড়া গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটি থেকে ৪/৫ বছর আগে পরপর ২ বছরে উচ্চ ফলনশীল জাতের ১০ টি আমের চারা পাই। এ চারা বাড়ির আঙ্গিনায় রোপণ করি। এখন এসব গাছ থেকে আমের ফলন পাচ্ছি। এ আম দিয়ে পরিবারের চাহিদা পূরণ করছি। বাড়তি আম আত্মীয় স্বজনদের দিচ্ছি। আমাদের বাড়িতেই এ উন্নত মানের উচ্চ ফলনশীল জাতের আম ফলবে তা কল্পনাও করতে পারিনি।
কাশিয়ানী উপজেলার চর পদ্মবিলা গ্রামের ছিরু মোল্লা বলেন, আমাদের গ্রামের প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই গাছে গাছে ঝুলছে আম। এর কৃতিত্ব কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের। আমার বাড়িতেও উচ্চফলনশীল আমের গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বারি আম -৩ পেকেছে। এ আম গাছ থেকে সংগ্রহ করছি। বারি আম- ৪ নামি জাতের আম। এ আম সেপ্টেম্বর অক্টোবরে সংগ্রহ করা যাবে। আর বারি আম-১১ বারমাসী জাতের আম। এ আম সার বছরই গাছে ধরে। বছরে অন্তত ৩ বার এ আম গাছ থেকে সংগ্রহ করা যায়।
মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের কৃষক ওবায়দুর রহমান বলেন, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট আমাদের জেলায় আমের বাগান ও পারিবারিক পর্যায়ে আমের চাষ সম্প্রসারিত করেছে। এর সুফল আমিও পাচ্ছি। এ কারণে এ জেলায় এ বছর আমের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই গাছে গাছে আম রয়েছে। ফলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহযোগিতা করার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটকে স্বাগত জানাই।
সূত্র :বাসস