তারুণ্যের সমাবেশে নবজাগরণ দেখছে বিএনপি। সরকার পতনের আন্দোলনে তরুণদের মাঠে নামিয়ে ঘুরিয়ে দিতে চায় রাজনীতির মোড়। কিন্তু সারাদেশে বিএনপির যে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হয়েছে সেখানে দলের তরুণ জনপ্রিয় নেতারাই উপেক্ষিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল যৌথভাবে সারাদেশে আয়োজন করছে অঞ্চলভিত্তিক এ তারুণ্যের সমাবেশ। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাঠের আন্দোলনে আস্থা রাখতে চাইছেন তরুণদের ওপর। অথচ ঢাকা মহানগরের দুই সিটিতে মেয়র পদে নির্বাচন করা জনিপ্রয় তরুণ নেতা ইশরাক হোসেন ও তাবিথ আওয়ালের মতো নেতারাও এ সমাবেশে উপেক্ষিত। এ তালিকায় আছেন চট্টগ্রাম ও বগুড়ার আরও বেশ কয়েকজন নেতা।
গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম দিয়ে বিএনপির এ ‘তারুণ্যের সমাবেশ’ শুরু হয়। পরবর্তীসময়ে ১৯ জুন বগুড়া এবং ২৪ জুন বরিশাল একই কর্মসূচি পালন করা হয়। আগামী ৯ জুলাই সিলেট, ১৭ জুলাই খুলনা এবং ২২ জুলাই ঢাকায় তারুণ্যের সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এ কর্মসূচি।
প্রথম তিনটি সমাবেশে তরুণদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের হাইকমান্ডও এতে খুশি। কিন্তু অভিযোগ উঠছে, চট্টগ্রাম থেকে তারুণ্যের সমাবেশ শুরু হলেও এই বিভাগের জনপ্রিয় তরুণ বিএনপি নেতা হুম্মাম কাদের চৌধুরীকে বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়নি। হুম্মাম কাদের চৌধুরীর পরিবার ও তার নিজের যে ত্যাগ দলের প্রতি রয়েছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা এ ধরনের কর্মসূচিতে তাকে বক্তা হিসেবে প্রত্যাশা করে। এই বিভাগের অন্য জনপ্রিয় তরুণ নেতা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, মামুনুর রশিদ মামুন, শাকিলাদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অথচ তুলনামূলক কম জনপ্রিয় মীর হেলাল বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, কিছু কিছু মানুষ হয়তো কষ্ট পেয়েছেন যে আমি বক্তব্য রাখিনি। আমি বক্তব্য না রাখার কারণে যারা কষ্ট পেয়েছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, আমার বক্তব্যের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তারেক রহমান আমাদের কী মেসেজ দিয়েছেন। আমাদের যে উদ্দেশ্য ছিল সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করেন তারা নিজেরাই বুঝতে পারেন যে এখানে সিনিয়র নেতাদের প্রায়োরিটি দিতে হয়। এই প্রোগ্রামেও প্রায়োরিটি পেয়েছে সামনেও পাবেন। যদি সুযোগ হয় আমরা জুনিয়ররা বক্তব্য দেবো।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী আরও বলেন, কারা বক্তব্য দেবেন এই সিদ্ধান্ত আগে থেকেই নেওয়া থাকে। এটাই তো আমাদের শেষ প্রোগ্রাম না। বক্তব্য রাখার সুযোগ তো আরও অনেক আছে।
তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপির জনপ্রিয় তরুণ নেতারা বক্তা হিসেবে উপেক্ষিত হচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে মীর হেলাল জাগো নিউজকে বলেন, না, না যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল অর্গানাইজ করছে। চিটাগাং থেকে আমি বক্তব্য দিয়েছি। অধিকাংশ তরুণ। সবাই তো আর বক্তব্য দিতে পারবে না। যাদের জনপ্রিয়তা আছে এমন লোক বক্তব্য দিতে পারছে। চট্টগ্রামে শাহাদাত ভাই, সোহেল ভাই, শামীম ভাইসহ ছাত্রদলের যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা সবাই তো তরুণ।
জানা যায়, বগুড়ার সন্তান হলেও তারুণ্যের সমাবেশে ছাত্রদলের গত কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তারুণ্যের সমাবেশের এসব কর্মসূচিতে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হক মিন্টুকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসা জনপ্রিয় নেতারা এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মহলে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন।
ফজলুর রহমান খোকন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা যারা মূল নেতৃত্বে দায়িত্ব পালন করছি তারা তো সব সময় বক্তব্য দেই। তারুণ্যের সমাবেশ যারা পরিচালনা করছেন তারাও তরুণ। সব জায়গায় আমাদের বক্তব্য রাখতে হবে এমন না।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন হাসান বলেন, আয়োজক তরুণরা। মূলত নতুন প্রজন্ম পুরোনোদের বক্তব্য শুনে নতুন কিছু শিখবে।
সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, বক্তব্য মুখ্য নয়, লাখো তরুণ শত বাধা উপেক্ষা করে একত্রিত হয়েছে- এটাই আমাদের মুখ্য বিষয়। বক্তৃতা করে ৫-১০-৫০ জন। তারা জীবন দেয় না। যারা মাঠে থাকে তারা জীবন দেয়।
আয়োজক সংগঠনের একটি জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু জাগো নিউজকে বলেন, বক্তা হিসেবে বিএনপির তরুণ নেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন না। আমরা নতুনত্ব আনছি। ভোটার, চাকরিচ্যুত তরুণসহ সাতজন বক্তব্য দিয়েছেন। এর মধ্যে এক মেধাবী শিক্ষার্থী রয়েছেন যিনি বিসিএস উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আওয়ামী লীগমনা না হওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে বাদ দেওয়া হয়েছে। এমন তরুণও বক্তব্য দিচ্ছে।
জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, বিএনপির তরুণ নেতা মানে তো আমরাই, আমরাই তো বক্তব্য দিচ্ছি।
তারুণ্যের সমাবেশে দলের তরুণ জনপ্রিয় নেতারা উপেক্ষিত হচ্ছেন কি না জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিষয়টি আমাকে কেউ বলেনি, আমি জানি না।
সূত্র :জাগোনিউজ২৪.কম