রিকশায় চালকের আসনে বসে একটু একটু করে প্যাডেল ঠেলছেন। তখন চোখে পড়ে চালকের ডান হাতটি কনুইয়ের নিচে আর নেই। হাতের পাতা, আঙুল কিছুই নেই। এদিক-ওদিক তাকিয়ে বাঁ হাত দিয়েই রিকশার হাতল ঘোরাচ্ছেন তিনি। দুই পায়ে প্যাডেল ঠেলে চলছেন। একসময় রিকশা ঘুরিয়ে একটি দোকানের সামনে দাঁড়ালেন। সেখানে কিছুটা ফাঁকা জায়গা। তাই সেখানে দাঁড়ালেন চালক।
মৌলভীবাজার শহরের কোর্ট রোডের চৌমোহনা এলাকায় গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে আবদুল গফুরের সঙ্গে দেখা। তিনি তখন কথায় কথায় বলেন, তাঁর বাড়ি হবিগঞ্জ সদরে।
বর্তমানে থাকেন মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগ এলাকাতে। স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। এর মধ্যে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে ও দুই ছেলে মাদ্রাসা পড়ছে। শুধু তাঁর সন্তানই না, তাঁর এক বোনের মেয়েকেও তিনি নিজের খরচে একটি মাদ্রাসায় পড়াচ্ছেন।
গফুর বলেন, একটি হাত নেই বলে কারও কাছে সাহায্য চান না। তবে কেউ নিজের থেকে তাঁকে সহযোগিতা করলে তা ফিরিয়ে দেন না। বর্তমান রিকশাটি বছরখানেক আগে তাঁকে দিয়েছে নাজাত ইসলামী মারকাজ নামের একটি সংস্থা।
এর আগেও এক ব্যক্তি তাঁকে একটি রিকশা দিয়েছিলেন, সেটি পুরোনো হওয়ায় চালানোর অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এই রিকশা চালানোর আগে তিনি ভাঙারির ব্যবসা করতেন। ভ্যান গাড়িতে বিভিন্ন স্থান থেকে পরিত্যক্ত, ভাঙা জিনিসপত্র সংগ্রহ করতেন।
এরপর প্রায় ৯ বছর সিলেট শহরে রিকশা চালিয়েছেন। এরপর একসময় মৌলভীবাজার শহরে চলে আসেন। মৌলভীবাজার শহরে ১২ বছর ধরে চলছে তাঁর রিকশার চাকা। এক হাতেই যাত্রী নিয়ে শহরের অলিগলি চষে বেড়ান প্রতিদিন। তবে সারা দিন রিকশা চালাতে পারেন না। বিকেল চারটার পর রিকশা নিয়ে বের হন। ভালো লাগলে রাত ৯-১০টা পর্যন্ত রিকশা চালান। এই কয়েক ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয়।
আবদুল গফুর বলেন, ‘অনেকে আমার রিকশায় ওঠেন না। এক হাত নেই, ঠিকমতো রিকশা চালাতে পারব কি না, এই ভয় পান।’
তবে প্রতিদিনের এই রোজগারের বাইরে মাসিক ভিত্তিতে দুটি ফাস্ট ফুডের দোকানের কাজ আছে তাঁর। নির্দিষ্ট সময়ে বাজার থেকে সেই দোকান দুটির কাঁচামালসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন করেন তিনি। বর্তমানে তিন মাস পরপর প্রতিবন্ধী ভাতাও পান।
আবদুল গফুর বলেন, ‘মায়ের পেট থাকিই (থেকেই) আমার একটা হাত এ রকম ছোট। এমনে (এমনিতে) কোনো সমস্যা হয় না। তবে রিকশা চালাইতে কষ্ট বেশি। কিন্তু কিছু করার নেই। এই এক হাত দিয়াই রিকশা চালাই, সব কাজ করি।’
সূত্র : প্রথম আলো