বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা বাংলাদেশে কেন আসেন, সে প্রশ্ন তুলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কারণ এখানে গণতন্ত্র নেই, এখানে নির্বাচন হয় না। গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) সহযোগিতায় নারী প্রতিনিধিদের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে কথা হচ্ছে কেন বিদেশিরা আসছেন। আজকে আমেরিকা থেকে একটা টিম আসবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটা টিম এসেছে। কেন এসেছে, এই কথাটা বোঝা গেল যে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। অন্য দেশে তো তারা যায় না। এখানে আসে কেন? কারণ, এখানে গণতন্ত্র নেই। এখানে নির্বাচন হয়নি, এখানে নির্বাচন হয় না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁরা (বিদেশি পর্যবেক্ষকেরা) এখানে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচন সম্পর্কে জানতে এসেছেন এবং তাঁরা বুঝতে চান।
নির্বাচন ও গণতন্ত্রের প্রশ্নে সরকারি দলের নেতাদের বক্তব্যে উষ্মা প্রকাশ করেন বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘দেখুন কী রকম প্রতারণার কথা বলে যাচ্ছে, আপনারা তো সবাই টেলিভিশন দেখেন, শোনেন। মনে হয় যেন একজন ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির…আমরাই ভালো নির্বাচন করি, আমরাই সত্যিকারের নির্বাচন করি, আমরাই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। আর দেখেন, সবার আগে আমাদের অ্যারেস্ট করে তারপরে তারা নির্বাচন করে…ফাঁকা মাঠে করে।’
বিএনপির মহাসচিব উল্লেখ করেন, একটা নির্বাচনের জন্য প্রথম যে জিনিসটা দরকার হয়, সেটা হচ্ছে সবার জন্য সমান সুযোগ। সব রাজনৈতিক দলকে অবশ্যই সমান সুযোগ পেতে হবে। কিন্তু এখানে সেই পরিবেশ নেই। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের একটা চরিত্রগত সমস্যা আছে, সেটা হচ্ছে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। তাদের পছন্দ একনায়কতন্ত্র। তারা মনে করে দেশে তারা ছাড়া ভিন্ন কেউ নেই। দেশের মালিক শুধু তারাই—এ রকম মানসিকতা তাদের।
প্রসঙ্গ মগবাজারে ককটেল বিস্ফোরণ
গত সোমবার রাতে মগবাজার এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এটাকে ‘চক্রান্ত’ বলে মন্তব্য করেন। এর জন্য সরকারকে দায়ী করে তিনি বলেন, তারা আবারও ইচ্ছা করেই গোটা দেশকে, জাতিকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে। এটা করা হচ্ছে, যারা সব সময় দোষারোপ করতে চায় যে বিরোধী দল বিএনপি এসব কাজ করে, তারা আজকে এই কাজগুলো করছে। মূলত সরকার তাদের যে বিভিন্ন সংস্থাগুলো আছে, তাদের দিয়ে এগুলো করাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এটার প্রমাণ দেখেন, আমরা কর্মসূচি দিচ্ছি কর্মসূচি চলছে। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি। তার সঙ্গে সঙ্গেই ওই কর্মসূচির বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘শান্তি সমাবেশ’, ‘শান্তি মিছিল’ নামে পাল্টা কর্মসূচি দিচ্ছে তারা—যা সংঘাতের দিকে ঠেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। আজকে আমরা একটা অসমযুদ্ধের মধ্যে আছি।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম দিনব্যাপী কর্মশালার উদ্বোধন করেন। কর্মশালায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের (ডিআই) ডানা এল ওল্ডস বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, নারীদের সমাজের সর্বক্ষেত্রে, সেটা সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে হোক, রাজনীতিতে হোক, সব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসার দরকার, তাদের নেতৃত্বে থাকা দরকার। তিনি আশা প্রকাশ করেন, যাঁরা কর্মশালায় অংশ নিচ্ছেন, প্রশিক্ষণের অর্জনগুলো তাঁরা সমাজে ছড়িয়ে দেবেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপন, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, রাশেদা বেগম হীরা, শিক্ষক মাজহারুল হক, প্রশিক্ষণ সেলের সদস্য রেহানা আক্তার রানু ও নেওয়াজ হালিমাসহ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নারী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : প্রথম আলো