গত ১৫ বছরে (২০০৮-০৯ হতে ২০২২-২৩ অর্থবছর) সমাজসেবা অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের আওতায় প্রায় ৫৫৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৪ টাকা সহায়তা পেয়েছে ভাতাভোগী, রোগাক্রান্ত ব্যক্তি, শিক্ষার্থী, ঋণগ্রহীতা ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এতিমখানা। মোট ৭৯ হাজার ৫০৭ জন ব্যক্তি ও ৪৬ স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে উক্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তথ্যগুলো সমাজসেবা অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
একই সূত্রে জানায়, উপকারভোগীদের মধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় ৩৪ হাজার ১২৯ জন বয়স্ক ভাতা পেয়েছেন ২১৫ কোটি ১ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ৮৬ কোটি ৫৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা বিধবা ভাতা পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭৩৬ জন। ১৯ হাজার ৮৪২ জন প্রতিবন্ধী পেয়েছেন ১৭৮ কোটি ৫৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা, ৩৪৫ জন ব্যক্তি অনগ্রসর ভাতা পেয়েছেন ৩ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ৩০৯ জনপ্রতিবন্ধীকে শিক্ষা উপবৃত্তি ২ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার টাকা, ২৩০ জন অনগ্রসর শিক্ষা উপবৃত্তি পেয়েছেন ৩ কোটি ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
এছাড়া ২০১৩-১৪ অর্থবছর হতে চলতি সময় পর্যন্ত গত ১০ বছরে ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস, স্ট্রোকজনিত কারণে প্যারালাইসিস, হৃদরোগে আক্রান্ত ১ হাজার ৯৫ রোগীর প্রত্যেকে ৫০ হাজার টাকা করে ৫৪ কোটি ৭৫ লাখ আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। বেসরকারি এতিমখানায় দেওয়া হয়েছে ৩ কোটি ৭ লাখ ৯২ হাজার টাকা। জেলা জুড়ে ৫৩ ভিক্ষুক পুনর্বাসনে দেওয়া হয়েছে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, চলতি অর্থবছরে স্নায়ুরোগ সংক্রান্ত ২৫ রোগীকে দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জাতীয় সমাজকল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে ১৫ বছর ১ হাজার ৪৯৪ ব্যক্তিকে অনুদান দেওয়া হয়েছে ১৯ লাখ ৭২ হাজার টাকা, হাসপাতালে সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় ৬৯৩ জন রোগীকে ১৪ লাখ টাকার চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ৪৬ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে ১১ লাখ টাকা এবং ৭ হাজার কর্মসংস্থান নিশ্চিতে ৫৫৬ ব্যক্তিকে সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া হয়েছে ৫ কোটি ৭৬ লাখ ২৬ হাজার ৭০৪ টাকা।
গত ১৫ বছরে ফেনীতে উপরোক্ত সহায়তা এবং এ কার্যক্রমের লক্ষ্য প্রসঙ্গে সমাজসেবা অধিদপ্তর ফেনী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দশ উদ্যোগের অন্যতম সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। ভাতা কার্যক্রমের প্রধান লক্ষ্য মানুষের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করা। দরিদ্রসীমায় পরিবারগুলোতে একজন বয়স্ক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হন। সেজন্য বয়স্ক ভাতা চালু করা হয়েছে। এভাবে প্রতিটি ভাতা কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিচালিত হয়ে থাকা। এর মাধ্যমে একজন প্রান্তিক মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার হয়।
ভাতা অনিয়ম, ব্যক্তির মৃত্যু হলেও ভাতা চলমান, অসত্য তথ্য উপস্থাপন করে ভাতা হাতিয়ে নেওয়া- এমন সংবাদ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব সমস্যা দূরীকরণে কর্মসূচি নিয়েছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।
এ প্রসঙ্গে উক্ত দপ্তরের ফেনী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, জেলাব্যাপী সকল উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সমাজসেবা অধিদপ্তরের আওতায় উপকারভোগীদের লাইভ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে৷ এর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, যারা প্রকৃত উপকারভোগী এবং যারা ভাতা পাবার যোগ্য তারা যাতে এ সুবিধার আওতায় আসতে পারেন।
তিনি বলেন, লাইভ ভেরিফিকেশন করার উদ্দেশ্য হলো, জেলা পর্যায়ে জানার সুযোগ থাকে না কারা ভাতা পাবার উপযুক্ত। দেখা যায়, অনেকে মারা যাওয়ার পরেও তার পরিবার টাকা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউনিয়ন পর্যায়ে চেয়ারম্যান ও ইউপি মেম্বারদের সহযোগিতা প্রয়োজন হয়। তারা যদি নিশ্চিত করতে পারে সেক্ষেত্রে সঠিক মানুষরা ভাতা পাবে। কিন্তু অনেক সময় তা সম্ভব হয় না।
তিনি বলেন, অনেকদিন যাবত উপকারভোগীদের সঠিক তালিকা নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। কারণ, পরিবার থেকেই তথ্য লুকানোর চেষ্টা করে। কোন উপকারভোগী মারা যাওয়ার পরেও নতুনরা সুযোগ পাচ্ছেন না।
তিনি জানান, ফেনীতে ৮৬ শতাংশ লাইভ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে, যা সন্তোষজনক।
সূত্র :বাসস