আরব নেতারা এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট শনিবার সৌদি রাজধানীতে আরব লীগের শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন। বৈঠকে নেতারা অন্যান্য দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আগেই গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার দাবির ওপর জোর দেবেন।
গাজায় ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক হামলায় ভয়াবহ ধ্বংস ও মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে আরব লীগ এবং ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) আজ এই জরুরী বৈঠকে বসছে।
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলা ও স্থল অভিযানে গাজায় ১১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক এবং তাদের মধ্যে অনেক শিশু।
খাদ্য, পানি এবং ওষুধের অভাবে গাজায় মানবিক ‘বিপর্যয়’ এর সতর্কবার্তা জানিয়ে সহায়তা সংস্থাগুলো সেখানে জরুরি যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়েছে।
চলতি সপ্তাহে আরব লীগের সহকারী সেক্রেটারি-জেনারেল হোসাম জাকি বলেছেন, গাজায় আগ্রাসন বন্ধে, ফিলিস্তিনের জনগণকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিতে, ইসরায়েলি দখলদারিত্বের নিন্দা জানাতে এবং গাজায় অপরাধের জন্য ইসরায়েলকে জবাবদিহি করতে আন্তর্জাতিক দৃশ্যপটে আরব ও মুসলিম দেশগুলোর দাবী ও অবস্থান তুলে ধরাই এই ব্লকের লক্ষ্য।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা শুরুর পর দীর্ঘ বিলম্বে এই বৈঠক আহবানের জন্য আরব নেতাদের সমালোচনা করে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গ্রুপ ইসলামিক জিহাদ শুক্রবার বলেছে, বৈঠক থেকে তারা ‘কিছুই আশা করছে না।’
গ্রুপের ডেপুটি সেক্রেটারি-জেনারেল মোহাম্মদ আল-হিন্দি বৈরুতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা এই ধরনের বৈঠকের ওপর আমাদের আশা রাখছি না, কারণ আমরা বহু বছর ধরে তাদের ফলাফল দেখেছি।’
ইসরায়েল এবং তার প্রধান সমর্থক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখনও পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন একটি অবস্থান যা শনিবারের বৈঠকে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি বিশ্লেষক আজিজ আলগাশিয়ান বলেছেন, একটি ঐক্যবদ্ধ ‘কূটনৈতিক ফ্রন্ট এতে আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর কাছ থেকে কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি হবে।’
এখন পর্যন্ত আঞ্চলিক নেতাদের সমালোচনা ইঙ্গিত করে যে, ‘এটি কেবল ইসরাইল-ফিলিস্তিনের বিষয় নয়, এই অবস্থা তৈরি করার জন্য ইসরায়েলকে সুযোগ দিচ্ছে মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্ব।’
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সাম্প্রতিক এই অঞ্চলে সফরের সময় এবং এই সপ্তাহে রিয়াদে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী জেমস ক্লিভারলির সফরে আরব নেতারা যুদ্ধবিরতির জোর দাবি জানিয়েছিলেন।
জেমস ক্লিভারলির বৃহস্পতিবার বলেছেন, ‘আমরা যা বলেছি তা হল যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো বোধগম্য। তবে আমরা যা স্বীকার করি তা হল ইসরায়েল তার নিজস্ব স্থিতিশীলতা এবং নিজস্ব নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমরা এই ভয়ানক পরিস্থিতির যত দ্রুত সম্ভব সমাধান দেখতে চাই। তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ হল গাজার মানুষের মানবিক চাহিদা। সে কারণেই আমরা সেদিকে মনোযোগ দিচ্ছি।’
মধ্যপ্রাচ্যের দুই হেভিওয়েট সৌদি আরব ও ইরান গত মার্চ মাসে একটি বিস্ময়কর সমঝোতা চুক্তিতে পৌঁছানোর পর সাত বছরের বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের অবসান ঘটিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় রিয়াদে ওআইসি বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির প্রত্যাশিত উপস্থিতি দেশটিতে তার প্রথম সফর।
ইরান হামাসের পাশাপাশি লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের সমর্থন করে। যুদ্ধ প্রসারিত হওয়ার উদ্বেগের কেন্দ্রে রয়েছে হিজবুল্লাহ এবং হুথি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি আরব ওয়াশিংটনের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এবং যুদ্ধ শুরুর আগে ইসরায়েলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বিবেচনা করার কারণে সম্ভাব্য হামলার জন্য দেশটি ঝুঁকিপূর্ণ বোধ করছে।
সৌদি আরবের কার্যত শাসক ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান শুক্রবার যুদ্ধের বিষয়ে তার প্রথম প্রকাশ্য মন্তব্যে ‘ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের ক্রমাগত লঙ্ঘনের’ নিন্দা করেছেন। তবে যুদ্ধের বিষয়ে রিয়াদ একাধিক বিবৃতিতে একই ধরনের সমালোচনা করেছে।
সূত্র :বাসস