জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা পল্লীতে শীতের আগমনে কুয়াশাচ্ছন্ন ভোর সময় মাটির তৈরি বিশাল এক চুলায় বড় কড়াই বসিয়ে সেখানে খেজুরের রস জ্বাল দিচ্ছেন কয়েকজন গাছি। তৈরি করছেন সু-স্বাদু খেজুরের গুড়।
গুড় তৈরীর কাজে ব্যস্ত গাছি নুরুল ইসলাম জানান, তারা পাঁচজন রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলা থেকে দিনাজপুর নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকায় গত তিন বছর থেকে শীত মৌসুমে গুড় তৈরী করেন। চলতি বছর হেমন্তের শুরু কার্তিক মাসে মাঝামাঝি গুড় তৈরীর জন্য কাজ শুরু করেছে। শীতের আগমন এই অঞ্চলে কিছুটা শুরু হয়ে গেছে।
তারা এই এলাকার খেজুরের গাছ মালিকদের নিকট থেকে চুক্তি করে নিয়েছেন। প্রায় ২ শতাধিক খেজুরের গাছ থেকে প্রতিদিন সকালে খেজুরের রস সংগ্রহ করছেন। সংগৃহীত খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। এ দৃশ্য চোখে পড়ে দিনাজপুর নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জ গ্রামে।
গতকাল সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেলো রস থেকে গুড় তৈরির প্রক্রিয়া। রাস্তার দু’পাশে সারি-সারি খেজুরের গাছে লটকানো রয়েছে মাটির হাঁড়ি। ভোরের সূর্য উঠার আগে গাছিরা রসভর্তি মাটির হাঁড়ি গাছ থেকে নামাচ্ছেন। এরপর মাটির তৈরি চুলায় টিনের বড় কড়াইয়ে জ্বাল করে গুড়-পাটালি ও লালি তৈরি করছেন। নতুন খেজুর রসের গুড় তৈরির পর তা চলে যাচ্ছে বাজারে। রস সংগ্রহ, গুড় তৈরি ও বাজারে বিক্রি করতে এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা।
তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চ-ীপুর গ্রামের নুরুল ইসলাম (৪২), নজরুল ইসলাম (৪৪) হাবিবুর রহমান (৩৫), রবিউল ইসলাম রবি (৩২) ও হাজের আলী (৩৫) খেজুরের গুড় তৈরির কাজে এসেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই তারা গুড় তৈরির কাজ করে আসছেন। বছরের পাঁচ মাস তারা এই কাজ করেন দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে। বাকি সময় এলাকায় থেকে অন্য কাজ ও ব্যবসা করেন।
গাছি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘বাপ-দাদার কাছ থেকে এই কাজ শিখেছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে খেজুরগাছ চুক্তি নিয়ে রস নামিয়ে গুড় তৈরি করে বিক্রি করি। আশ্বিন মাসের ১৫ তারিখে এবারই প্রথম নবাবগঞ্জে এসেছি। এটাই আমাদের মূল ব্যবসা। বাকি সময় আমার এলাকায় অন্য ছোট ব্যবসা বা কৃষিকাজ করি।’ গাছিরা জানালেন, ওই এলাকার রাস্তার পাশের ২৫০টি খেজুরগাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তারা। তা থেকে খেজুরের গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা প্রতিটি গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিটি গাছ হতে শুরুতে এক থেকে ২ কেজি করে রস সংগ্রহ হয় এবং আস্তে-আস্তে তা বেড়ে যায়। প্রথমদিকে প্রতিদিন আনুমানিক ২০-২৫ কেজি করে খেজুরের গুড় তৈরি হয়। এটা পর্যায়ক্রমে বেড়ে ১/২ মণ পর্যন্ত গুড় তৈরি হয়। প্রতি কেজি খেজুরের গুড় বাজারে পাইকারদের কাছে ১৮০ টাকায় এবং খুচরা ২০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
গ্রামের ঘরে-ঘরে খেজুর রসের পিঠা, পায়েস, গুড়ের মুড়ি-মুড়কি ও নানা ধরনের মুখরোচক খাবার তৈরির ধুম পড়ে এ সময়। তবে অনেকেই বলছেন, বাজারে চিনির দাম বেশি। চিনির দামের থেকে একটু বেশি হলেও সুস্বাদু হওয়ায় খেজুরের গুড়ের চাহিদা রয়েছে অনেক।
দেখা যায় গুড় কিনতে এসেছেন মমতাজ আলী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘শীত শুরু হয়েছে। পিঠা-পায়েস খেতে স্বাদে গন্ধে সুস্বাদু খেজুরের গুড় অতুলনীয়। গাছিদের তৈরি গুড় খুব মানসম্মত। তারা সবার সম্মুখে খেজুরের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরী করছেন। সে কারণে এখানে গুড় কিনতে এসেছি। গুড় তৈরীর পর প্রতিদিন লোকজন গুড় কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র :বাসস