নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট জয়ের বিশ্বাস দলের সবার মধ্যেই ছিল বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।
সাকিব আল হাসানসহ দলের সেরা পাঁচ খেলোয়াড়কে ছাড়াই সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাঁচ দিন দুর্দান্ত লড়াইয়ের পর পূর্ণ শক্তি নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫০ রানের জয় পায় টাইগাররা।
অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেই জয়ের স্বাদ পেয়েছেন শান্ত। কিন্তু তার জন্য বড় পাওয়া হলো, প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে অধিনায়কত্বের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করেন তিনি।
দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর সেঞ্চুরিতে ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ও সব মিলিয়ে দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ।
ইনজুরির কারনে সাকিবের অনুপস্থিতিতে অধিনায়কত্ব পাবার পর শান্ত স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, নিজেদের সেরাটা দিয়ে ঘরের মাঠে অন্তত একটি ম্যাচে জয় পেতে চান এবং তার কথা বাস্তবে রুপ নিয়েছে।
ম্যাচ শেষে শান্ত বলেন, ‘একটা ম্যাচ জয় সবসময়ই ভালো অনুভূতি দেয় এবং আবার সেটি অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আমরা একটি দল হিসেবে খেলেছি এবং গত পাঁচ দিনে খুব ভালো ক্রিকেট খেলেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত ছিলাম। আমি কাউকে অনুপ্রাণিত করার জন্য এটি (ম্যাচ জয়ের বিষয়ে) বলিনি। আমি এই সিরিজ জিততে চাই ও আমরা সিরিজ জয়ের জন্যই খেলবো। এমন নয় শুধুমাত্র আমারই সেই বিশ্বাস আছে, আসলে দলের সবারই বিশ্বাস আছে। আমি যখন প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এভাবে ভাবতে দেখেছি, তখন এটা আমাকে আত্মবিশ্বাসী করেছে।’
নিজেদের চেনা কন্ডিশনে খেলা হওয়ায় ব্যাটিং-বোলিংয়ে ভালো পারফরমেন্সের কারনে বাংলাদেশের সিরিজ জেতা উচিত বলে মনে করেন শান্ত। তিনি বলেন, ‘নিজেদের সেরাটা দেওয়ার উপযুক্ত আমাদের নিজেদের কন্ডিশনে খেলছি। আমার মনে হয় সিরিজ জয় সম্ভব। কাজ এখন অর্ধেক হয়েছে, আর এক ম্যাচ বাকি। তবে বিষয়টা এমন নয় যে, আমরা এমনি এমনিই দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে যাব। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে ও ঐ পাঁচ দিন আবারও কঠিন হবে। আমাদের পারফরমেন্সের আরো উন্নতি ঘটবে এবং পরের ম্যাচ জিতবো বলে আমি আশা করছি।’
দ্বিতীয় ইনিংসে ১০৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার আগে, প্রথম ইনিংসে ৩৫ বল ৩৭ রান করেছিলেন শান্ত। কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে না পারায় সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
শান্ত জানান, নিউজিল্যান্ড তাদের বোলিং পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছেন। এজন্য প্রথম ইনিংসে ঝুঁকি নিতে হয়েছে।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে শান্ত বলেন, ‘প্রথম ইনিংসে কিছুটা আক্রমণাত্মক ফিল্ডিং সাজিয়েছিলো তারা। স্বাভাবিকভাবেই আমার কাছে বাউন্ডারির মারার বিকল্প ছিলো। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, কাছাকাছি অনেক ফিল্ডার থাকায় এই উইকেটে বেশিক্ষণ রক্ষণাত্মক খেলা সহজ ছিল না। তারা যখন কাছে-দূরে মিলিয়ে ফিল্ডিং সেট করেছিল, তখন রক্ষণাত্মক শট খেলতে আমার সমস্যা হয়নি। পরে আমি আমার স্বাভাবিক গেম প্ল্যানে গেলাম। আমি তখন ঝুঁকিপূর্ণ শটে যাইনি। তারা আবার আক্রমনাত্মক হলে করলে আমিও করেছি। এটাই পরিকল্পনা ছিল। কখনও কখনও ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা করতে হয় এবং এজন্য আমি সেভাবেই খেলেছি।’
১৮৪ রানে ১০ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। টেস্ট ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মত ১০ উইকেট নেন তিনি। এর আগে সাকিব আল হাসান এবং মেহেদি হাসান মিরাজ দু’বার করে ১০ উইকেট করে নিয়েছিলেন।
প্রথম ইনিংসে ১০৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের ৩১০ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ডকে ৩১৭ রান রানে আটকে রাখতে ভূমিকা রাখেন তাইজুল। এতে মাত্র ৭ রানের লিড পায় কিউইরা। দ্বিতীয় ইনিংসে শান্তর সেঞ্চুরির সুবাদে সব উইকেট হারিয়ে ৩৩৮ রান করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৭৫ রানে ৬ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডকে মাত্র ১৮১ রানে গুটিয়ে দিয়ে দলকে জয়ের স্বাদ দেন তাইজুল।
তাইজুলের প্রশংসা করে শান্ত বলেন, ‘আমি মনে করি অনেক বছর ধরে টেস্ট ফরম্যাটে সেরা বোলারদের একজন তাইজুল। তার সবচেয়ে বড় শক্তি, একই জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বল করতে পারা।’
শান্ত আরও বলেন, ‘আপনি খেয়াল করলে দেখবেন এই টেস্টে দীর্ঘ স্পেলে বল করেছে সে এবং সবসময় একই জায়গায় বল করেছে। আমি আলাদা কোন পরিকল্পনা দেইনি, সেও করেননি। তার পরিকল্পনা ছিল কিভাবে একই জায়গায় দীর্ঘ সময় বল করা যায়।’
শান্ত জানান, ম্যাচ জয় বা হার নিয়ে চিন্তা না করে অধিনায়ক হিসেবে নিজেদের পরিকল্পনায় অটুট থাকবেন।
তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি একজন অধিনায়ক হিসেবে জয় বা হার নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। আমি নিজে চেষ্টা করি এবং দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে পরিকল্পনা ঠিক রাখার বিষয়ে কথা বলি। আর খেলোয়াড়দের মধ্যে সেই অঙ্গীকার আছে কি না। খেলোায়াড়রা কি শতভাগ দিচ্ছে নাকি? আমি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে এটাই চাই এবং আমি নিজেও সেটা চেষ্টা করি। যখন এই সব কিছু ঠিকঠাক হবে তখন ফলাফল আসবে।’
শান্ত আরও বলেন, ‘কোন দিন আমরা জিতবো, আবার কোন দিন জিততে পারবো না। কিন্তু আমরা যদি আগে থেকে ফলাফলের কথা চিন্তা করি, তাহলে এটা কঠিন। এটা আমার ব্যক্তিগত পরিকল্পনা। আরেকটি বিষয় হলো হ্যাঁ, এই ধরনের জয় অবশ্যই আপনাকে অনুপ্রাণিত করবে।’
সূত্র :বাসস