নওগাঁ জেলার মনোরম প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠেছেন সাকিলা পারভীন। তাই শহরে এসেও সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ফিরিয়ে এনেছেন ছাদ বাগানের মাধ্যমে। সবুজ গাছপালা ও প্রকৃতির সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো তাকে অনুপ্রাণিত করেছে এই বাগান গড়ে তুলতে। তাই রাজধানীর কল্যাণপুরে বর্তমান ঠিকানায় গড়ে তুলেছেন মায়াবী ছাদ বাগান।
তিনি বলেন, ‘নওগাঁর পরিবেশ আমাকে সব সময় প্রকৃতির কাছাকাছি থাকতে শিখিয়েছে। আর শহরের এই ইট-কাঠের জঙ্গলে ছাদ বাগানই আমার সেই প্রকৃতির সাথে যোগসূত্র।’
নওগাঁর প্রকৃতিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে দেখেছেন সাকিলা। তিনি বলেন, ‘সেই দৃশ্য অনুভব করে আমিও ছাদে ছোট পরিসরে সবজি চাষ শুরু করেছি। মরিচ, মিষ্টি আলু আর বেগুন গাছ লাগিয়েছি। নিজের হাতে লাগানো সবজি তুলতে পারার অনুভূতিটা আমাকে নওগাঁর দিনগুলো মনে করিয়ে দেয়। তাজা, রাসায়নিকমুক্ত সবজি পাওয়া যায়, যা শরীরের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের নওগাঁ আমের জন্য বিখ্যাত। এ ছাড়া সেখানে অনেক ধরনের ফল গাছ আছে। তাই ফল গাছের প্রতি আমার বিশেষ দুর্বলতা আছে। বরিশাল থেকে আনা একটি কমলা গাছ ছাদে লাগিয়েছি। গাছের সবুজ পাতা আর সতেজ ফল শহরের ধুলোবালির মধ্যে এক টুকরো স্বস্তির পরিবেশ তৈরি করে। মনে করিয়ে দেয় নওগাঁর দিনগুলো। তাজা ফল খেতে পারাটা সত্যিই আনন্দের।’
তার ছাদ বাগানে আরও আছে তুলসি ও নিম গাছ। তিনি বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে এ ধরনের ভেষজ উদ্ভিদ এখনো চারপাশে দেখা যায়, তবে শহরের বুকে খুব কম। তাই এগুলো আমি ছাদে লাগিয়েছি। তুলসি আমাদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য ভালো, আর নিমের উপকারিতা তো সবাই জানেন। নিয়মিত এগুলো ব্যবহার করার সময় আমি নওগাঁর সেই বিশুদ্ধ প্রকৃতির ছোঁয়া পাই।’
নওগাঁর প্রকৃতি ও ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে সাকিলা লিলি ও গাঁদা ফুলের গাছ লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘গাঁদার গন্ধ মশা তাড়াতে সাহায্য করে, আর লিলির সৌন্দর্য আমাকে প্রতিদিন প্রকৃতির কাছাকাছি থাকার অনুভূতি দেয়। নওগাঁর ফুলের সেই সৌন্দর্য আমি আমার ছাদেই ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছি, যাতে শহরের ব্যস্ত জীবনে কিছুটা প্রশান্তি পাই। এ ছাড়া আমার ছাদ বাগানে অন্য গাছও আছে।’
বাড়ির মালিক ছাদে আরও গাছ লাগাতে উৎসাহ দেন বলে জানান তিনি। সাকিলা বলেন, ‘বাড়িওয়ালাও আমার গাছের এই সবুজ পরিবেশ পছন্দ করেন। তিনি আরও গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন।’
গাছের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে সাকিলা বলেন, ‘প্রতিদিন আমি বাগানের গাছগুলোতে পানি দিই, মাটি নিয়মিত পরিবর্তন করি এবং প্রয়োজনে জৈব সার প্রয়োগ করি।’
ছাদ বাগানের উপকারিতা সম্পর্কে সাকিলা বলেন, ‘শহরের এই জীবনে এক টুকরো সবুজ প্রকৃতির মাঝে বসবাস করতে পারাটা অনেক বড় পাওয়া। তাজা ফল-সবজি পেয়েও ভালো লাগে কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা, এই বাগান আমাকে মানসিক প্রশান্তি দেয়। ছাদে গাছ লাগানোর মাধ্যমে আমরা কিছুটা হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে পারি।’