মবারের মতো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
সোমবার তার ছোট ভাই শামীম এস্কান্দার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এ আবেদন করেন। আবেদনে এবারও সাজা মওকুফ ও শর্ত শিথিল করে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
মতামতের জন্য আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতোমধ্যে পাঠানো হয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইনি মতামতের পর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক যুগান্তরকে বলেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনটি আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে আইনগত মতামত দিয়ে শিগগিরই তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
মূলত আগের শর্ত বহাল রেখে মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে খালেদা জিয়ার।
২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরু হলে পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নির্বাহী আদেশে খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে দুটি শর্তে ছয় মাসের মুক্তি দেন। ২৫ মার্চ কারাগার থেকে মুক্ত হন তিনি।
শর্তের প্রথমটি হলো— খালেদা জিয়াকে বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। দ্বিতীয়ত তিনি বিদেশ যেতে পারবেন না। এর পর পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক দফায় ছয় মাস করে খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ায় সরকার।
এদিকে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনীতি করতে কোনো বাধা নেই। তাদের এমন মন্তব্যে দ্বিমত পোষণ করে সরকারের প্রভাবশালী দুজন মন্ত্রী বলেন, মুক্তির শর্ত অনুযায়ী খালেদা জিয়ার রাজনীতি করার সুযোগ নেই।
এদিকে চেয়ারপারসনের রাজনীতি করা না করা নিয়ে সরকারের অতি উৎসাহকে সন্দেহের চোখে দেখছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। খালেদা জিয়াকে নিয়ে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করতে সিনিয়র নেতাদের নির্দেশ দেয় হাইকমান্ড। এ ইস্যুতে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের কোনো প্রতিক্রিয়া না জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। দলের সিনিয়র নেতারা বলছেন, সময় হলেই খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন।
খালেদা জিয়া হার্টের সমস্যা, লিভার সিরোসিস ছাড়াও নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন। বহু বছর ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, দাঁত ও চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতা রয়েছে তার। কারাগার থেকে বেরোনোর পর চিকিৎসার জন্য কয়েক দফা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন তিনি। সর্বশেষ ২৭ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ আদালত। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেওয়া হয়। এর পর ৩০ অক্টোবর এই মামলায় আপিলে তার আরও পাঁচ বছরের সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর করেন হাইকোর্ট। একই বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন একই আদালত। সরকারের নির্বাহী আদেশে তার এ সাজা স্থগিত করা হয়।
সূত্র :যুগান্তর