সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধে হাইকোর্টের রায় পূর্ণ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন নারী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ।
রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা বন্ধের দাবিতে আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক মানববন্ধন সমাবেশে আজ বক্তারা এ দাবি জানান।
সমাবেশে বক্তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সংঘটিত যৌন হয়রানির ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তারা বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে ২০০৯ সালে মহামান্য হাইকোর্টের রায় ও নির্দেশনা অবমাননা করায় এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। যৌন হয়রানির ঘটনা প্রতিরোধে হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন বন্ধে মহামান্য হাইকোর্টের এক রায়ে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধ কমিটি’ গঠনের নির্দেশ দেয়। এরপর এক যুগ পার হয়ে গেলেও এ ধরনের কমিটি করার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনও উদাসীন রয়ে গেছে।
মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, একসময় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া বিশ^বিদ্যালয়গুলোর কিছু সংখ্যক শিক্ষকের নারীবিদ্বেষী ও কুরুচিপূর্ণ মনোভাবের কারণে যে অধোগতি দেখা যাচ্ছে তার দায় বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনকেই নিতে হবে।
সকল বিশ^বিদ্যালয়ে যৌন হয়রানিমূলক ঘটনা প্রতিহত করতে এবং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করতে বিশ^বিদ্যালযের শিক্ষক সমিতিকে জোরালো ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়কে আরো তৎপর ও দৃঢ় ভুমিকা পালন করতে হবে।
মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আমরা এমন একটি সমাজে বসবাস করছি, যেখানে এখনও নারীর সংগ্রাম করে টিকে থাকার মতো শক্ত অবস্থান তৈরি হয়নি। যৌন হয়রানির ঘটনায় নারী সহকর্মীর অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে জবাবদিহিতা চাওয়াকে মেনে নিতে না পারা পিতৃতান্ত্রিক কাঠামোর আদি রূপ। এটি একদিকে নারীর ক্ষমতায়নকে যেমন অস্বীকার করছে, তেমনি সমাজের ভেতরে নারীর প্রকৃত অবস্থারও প্রতিফলন।
ডা. ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও অ্যাডভোকেট মাসুদা রেহানা বেগম, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের প্রতিনিধি জয়া সরকার, ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক রীনা আহমেদ এবং ঢাকা মহানগর কমিটির আন্দোলন সম্পাদক জুয়েলা জেবুননেসা খান।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) অ্যাডভোকেট দীপ্তি শিকদার এর পরিচালনায় মানববন্ধন কর্মসূচিতে সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতৃবৃন্দ, প্রিন্ট ও ইলেক্ট্র্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও একশন এইড বাংলাদেশসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে।
সূত্র : বাসস